এই সময়: স্কুল চলাকালীন পড়ুয়ারা শিক্ষা দপ্তরের অনুষ্ঠান ছাড়া কোনও কিছুতে অংশ নিতে পারবে না। বিশেষত, রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে। রাজ্য প্রশাসনের সাম্প্রতিক এই নিদানে নতুন করে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। আরজি কর হাসপাতালের তরুণী ডাক্তারকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে রোজই প্রতিবাদ মিছিল হচ্ছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পড়ুয়াদেরও এ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছে।সম্প্রতি স্কুলশিক্ষা কমিশনারেটের তরফে জেলার শিক্ষা কর্তাদের সতর্ক করে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। শুক্রবার জেলাশাসকদের কাছে রাজ্যের মুখ্যসচিবের বার্তাও গিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছিল, কোথাও স্কুল-টাইমে স্কুল ড্রেসে পড়ুয়ারা যেন মিছিলে অংশ না-নেয়। নিলে স্কুলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। যদিও তারপরেও প্রতিবাদ মিছিল বন্ধ হয়নি।
মিছিলে খুদে পড়ুয়াদের সামিল হওয়ার কারণ জানতে চেয়ে শনিবার রাজ্যের বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শো-কজ় নোটিস পাঠালেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক-ডিআই) ও জেলা বিদ্যালয় প্রাথমিক সংসদের (ডিপিএসসি) চেয়ারম্যানরা। চিঠি পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জবাব দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে হাওড়ার তিনটি ও পূর্ব মেদিনীপুরের একটি স্কুলকে।
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই শনিবার রাজ্যজুড়ে পাল্টা মিছিল ও জমায়েত করতে শুরু করেন স্কুলের পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকেরা।
শুক্রবারে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় স্কুল পড়ুয়াদের। এতে বিধি লঙ্ঘন হয়েছে—এই অভিযোগে হাওড়ার তিনটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শো-কজ় করেছেন জেলার ডিআই।
শনিবার দুপুরে এ রকমই প্রতিবাদ মিছিল করে পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না দক্ষিণ আনুখা মোক্ষদা বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। তাদের বিক্ষোভের জেরে শিক্ষকেরা এ দিন স্কুলে ঢুকতেই পারেননি। ওই পড়ুয়াদের দাবি, আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে তারাও মিছিলে পা মেলাতে চায়। কিন্তু সরকারি নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে প্রধান শিক্ষিক তপন দাস মিছিলের অনুমতি দেননি। এতে পড়ুয়ারা গেটে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে শিক্ষকরা এক ঘণ্টার বেশি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন। এ দিন ক্লাস হবে না ঘোষণার পরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
একই ইস্যুতে শনিবার নদিয়ার বেশ কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়াদের ইউনিফর্ম পরে প্রতিবাদ-মিছিলে হাঁটতে দেখা যায়। এ দিন দুপুরে নবদ্বীপ ব্লকের স্বরূপগঞ্জ পানশিলা উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও শান্তিপুর ব্লকের বাগ আচরা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়-সহ জেলার কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়াদের স্কুল ড্রেসেই প্রতিবাদ মিছিলে দেখা যায়। সঙ্গে কয়েক জন শিক্ষক, শিক্ষিকাকেও দেখা যায়।
বীরভূমের নলহাটি ১ নম্বর ব্লকের কুরুমগ্রামের মিত্রভূম উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষের নোটিস উপেক্ষা করে স্কুলের গেটে তালা ভেঙে মিছিলে সামিল হয়। পানশিলা বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শম্পা মৈত্র এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ছুটির পরে স্কুলের ছাত্রীরা নিজেদের উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল করেছে। ওরা স্কুল ড্রেসে থাকায় পথে কোনও বিপদ যাতে না হয়, তা দেখতে আমাদের কয়েক জনকে থাকতে হয়েছিল।’
বাগ আচরা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দীপক বিশ্বাসের দাবি, স্কুল থেকে উদ্যোগ নিয়ে কোনও মিছিলে পড়ুয়াদের সামিল করা হয়নি। স্কুল ছুটির পর বাইরে কী হয়েছে, তিনি জানেন না। স্কুলের কোনও শিক্ষক সেখানে ছিলেন না। শুক্রবার বিকেলে হাওড়ার বলুহাটি হাইস্কুল, বলুহাটি গার্লস হাইস্কুল এবং ব্যাঁটরা রাজলক্ষ্মী বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মিছিলে হাঁটতে দেখা যায়। তিনটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের শো-কজ় নোটিস পাঠানো হয়েছে। বলুহাটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অঞ্জন সাহার দাবি, স্কুল ছুটির পর মিছিল হয়েছে। কোনও শিক্ষক প্রতিবাদ মিছিলে হাঁটেননি।
তৃণমূলের রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ গোটা বিষয়টিকে ‘কুৎসা ও অপপ্রচার’ বলেই দাবি করেছেন। তিনি ওই শো-কজ় নোটিস নিয়ে দলের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। কুণাল এ দিন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে বিশদে খোঁজ নিয়েছি। দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় স্তরে কিছু রাজনৈতিক শক্তি স্কুল পড়ুয়াদের মিছিলে হাঁটতে বাধ্য করছে। কোথাও স্কুলে কর্মরত কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকাও রাজনৈতিক পক্ষপাত করে কচিকাঁচাদের পথে নামাচ্ছেন। শিক্ষা দপ্তর সেটা রুখতে চেয়েছে।’
তাঁর আরও ব্যাখ্যা, শিক্ষা দপ্তর একবারও বলেনি যে, স্কুল পড়ুয়াদের প্রতিবাদে সামিল হওয়া যাবে না। জানানো হয়েছে, স্কুলে পঠনপাঠনের সময়ে তা যেন না হয়। কোথাও কোথাও তা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছিল। কুণালের কথায়, ‘স্কুলের আগে বা স্কুল ছুটির পরে যদি কেউ প্রতিবাদ করে, মিছিল করে, তাতে কারও কিছু বলার নেই।’