• হাসপাতাল কর্মীদের ব্যকগ্রাউন্ড চেক মাস্ট
    এই সময় | ২৫ আগস্ট ২০২৪
  • সুনন্দ ঘোষ

    হাসপাতালের প্রতিটি ইঞ্চি নিরাপত্তা দিয়ে মুড়ে ফেললেও ৯ অগস্টের অভিশপ্ত রাত যে আরজি কর হাসপাতালে আর ফিরে আসবে না, এমনটা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেন্দ্রীয় বাহিনীর শীর্ষকর্তারা।কেন?

    তাঁদের দাবি, হাসপাতালের সাধারণ কর্মী, বেসরকারি নিরাপত্তায় নিযুক্তরা, সিভিক ভলান্টিয়ার এমনকী চিকিৎসক ও নার্সদের অ্যান্টিসিডেন্টস বা পিছনে ফেলে আসা ইতিহাস (মূলত অপরাধ সংক্রান্ত) যাচাই করা দরকার। সমস্যার মূলে কুঠারাঘাত না-করতে পারলে সিসিটিভি, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা দিয়েও লাভ হবে না, মনে করছেন বাহিনীর কর্তারাই।

    দিন তিনেক হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আরজি কর হাসপাতালে মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী — সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স বা সিআইএসএফ। বাহিনীর কর্তারা জানিয়েছেন, মূলত হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কলকাতা পুলিশকে তারা সাহায্য করছেন। ইতিমধ্যেই হাসপাতালের প্রতিটি কোণা ঘুরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

    ১৪ অগস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুরের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অবিলম্বে তার মেরামত করে পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়াও প্রয়োজন বলে মনে করছেন বাহিনীর কর্তারা। নয়তো হাসপাতালে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে না।

    যদিও এতো কিছুর পরেও বাহিনীর কর্তাদের মতে, হাসপাতালে রাত-দিন যাঁরা ডিউটি করছেন, যাঁরা নিয়মিত হাসপাতালে যাতায়াত করছেন, তাঁদের অ্যান্ডিসিডেন্টস চেক করা দরকার। উদাহরণ দিয়ে এক কর্তা বলেন, ‘ওই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য ইতিমধ্যেই সঞ্জয় রায় নামে যে সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁর ফেলে আসা বহু ‘কীর্তি’ জানা যাচ্ছে। এটাই যদি আগে থেকে চেক করে নেওয়া হতো, ঠিক হতো, এরকম ব্যাকগ্রাউন্ডের কাউকে হাসপাতালের কোনও কাজেই নিযুক্ত করা হবে না, তা হলে হয়তো এমন ঘটনা আটকানো যেতো।’

    তবে, এই পুরনো ইতিহাস চেক করার কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের। সিআইএসএফ কর্তারা জানাচ্ছেন, আপাতত তাঁরা বাইরে থেকে আসা লোকজনের উপরে নজরদারিতে জোর দিতে চাইছেন। সামগ্রিক ভাবে হাসপাতালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি জিনিস পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও চেয়েছেন তাঁরা।

    সিআইএসএফ চাইছে, বেসরকারি হাসপাতালে যেমন রোগীর আত্মীয়দের ভিজ়িটর্স পাস দেওয়া হয়, এখানেও তেমন পাস ব্যবস্থা চালু হোক। বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু পাস কিছু হাসপাতালে থাকলেও সে ব্যবস্থায় খুশি নন বাহিনীর কর্তারা।

    তাঁরা বলছেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে এত লোক সমাগম হয় না। হিসেব নিয়ে দেখেছি, আরজি করে শুধু ওপিডি-তেই প্রতিদিন ৬-৭ হাজার পেশেন্ট আসেন। অন্য বিভাগ ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজন মিলিয়ে সংখ্যাটা দিনে প্রায় ২০ হাজার। চেস্ট, গাইনি, অর্থো-সহ এতগুলি বিভাগ। আমরা বলেছি প্রতিটি বিভাগের জন্য আলাদা রঙের পাস তৈরি করতে। যে আত্মীয় অর্থোর পাস নিয়ে হাসপাতালে ঢুকবেন, তিনি অন্য কোনও বিভাগে যেতে পারবেন না। এই মুভমেন্ট রেস্ট্রিকশন করাটা খুব জরুরি। নয়তো এখন যে যেখানে পারছেন ঢুকে পড়ছেন। আটকানোর কোনও ব্যবস্থাই নেই।’

    হাসপাতালে বা কোনও বিল্ডিংয়ে ঢোকার সময়ে মহিলাদের দেহ-তল্লাশির জন্য আলাদা ফ্রিস্কিং বুথের প্রয়োজন। বাইরের গাড়ির ঢোকার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ, কিছু জায়গায় জোরালো আলোর ব্যবস্থা, কিছু জায়গায় পাঁচিল মেরামত, হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর ও মেটাল ডিটেক্টর ডোর ফ্রেম বসানোর জন্যও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

    বাহিনীর এক কর্তা বলেন, ‘ডোর ফ্রেম ও হ্যান্ড ডিটেক্টর দু-তিন দিনের মধ্যে পেয়ে যাওয়ার কথা। হাসপাতালে ১৪১টি সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। তার অধিকাংশই খারাপ। সেগুলোও খুব তাড়াতাড়ি সারিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আরও অন্য জায়গায় ক্যামেরা বসানোর প্রয়োজন। সেগুলি বসাতে বেশ কিছু দিন লাগার কথা।’
  • Link to this news (এই সময়)