• মুখ্যমন্ত্রীর কথায় স্বপ্ন দেখছেন প্রতিভাবান অ্যাথলেট দেবার্জুন
    বর্তমান | ২৫ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, ঝাড়গ্রাম: টানা ছ’ বছর ধরে ২০টি পুরস্কার জিতেছেন হার্ডলসে।  ঝাড়গ্রামের সেই আদিবাসী অ্যাথলেট দেবার্জুন মুর্মু একটি চাকরির জন্য হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছেন। খেলোয়াড়ের কোটায় রেল ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিসে চাকরির আবেদনও করেছিলেন, কিন্তু শিকে ছেঁড়েনি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে ঝাড়গ্রামে এসে বলেছেন, জঙ্গলমহল কাপ ও বিভিন্ন খেলাধুলোয় প্রতিভাবান যুবক যুবতীদের পুলিসের চাকরি দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই কথা শুনে ফের আশায় বুক বেঁধেছেন  দেবার্জুন। যদি পুলিসে একটা চাকরি হয়, তবে অ্যাথলেটিক্সে আরও এগতে পারবেন তিনি। ২৬ বছরের এই যুবক আপাতত কলকাতার সল্টলেকের একটি জিমে ট্রেনারের কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন। 

    ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কের সামনে কৃষ্ণনগর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের এই যুবক ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। মা গৃহবধূ। বহু কষ্টে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি গ্রাজুয়েশনও কমপ্লিট করেছেন। ২০২০ সালে ৮০তম অল ইন্ডিয়া ইন্টার ইউনিভার্সিটি অ্যাথলেটিক্সে ১১০ মিটার হার্ডলসে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে ৬৯তম রাজ্য অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপে ১১০ মিটার হার্ডলসে প্রথম ও ৪০০ মিটার হার্ডলসে তৃতীয় স্থান দখল করেছেন। একইভাবে ২০১৭ সালে ৬৭তম রাজ্য অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১১০ মিটার হার্ডলসে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। ২০১৪ সালে ৬৪তম রাজ্য অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১১০ মিটার হার্ডলসে প্রথম হয়েছেন। ২০১৫ সালে ৩১তম ন্যাশনাল জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ সাল টানা ৬ বছর ধরে এরকম ২০টি পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। 

    দেবার্জুন বলেন, ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। মা গৃহবধূ। আমরা তিন ভাই। আমি বড়। আর্থিক অনটনে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারিনি। ছোটবেলা থেকেই অ্যাথলেটিক্স আমার প্রিয় খেলা। আমি কলকাতা পুলিসের হয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয়লাভ করেছি। খেলাধুলোর জগত থেকে অনেকেই চাকরির সুযোগ পান। সেইমতো আমি রেল ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিসে আবেদন করেছিলাম। এখনও চাকরি পাইনি। গোপীবল্লভপুর এলাকায় আমার সঙ্গেই অ্যাথলেটিক্সে সফল হয়েছিলেন দুজন। তাঁরা সম্ভবত চাকরি পেয়েছেন। আমি খুব কষ্টে গ্র্যাজুয়েশন করেছি। আমাদের অ্যাথলেটিক্সের কোচের জন্য অন্যান্য ডিপ্লোমা করতে হয়। তার জন্য পড়াশোনা করছি। কলকাতার জিমে ট্রেনারের কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি। জেলা পুলিসের আধিকারিক ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, দয়া করে পুলিসের চাকরিতে সুযোগ দিলে আমি খেলাধুলোর চর্চা চালিয়ে যেতে পারব। 

    এই গ্রামের বাসিন্দা তথা ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি রেখা সোরেন বলেন, ছেলেটি আমাদের প্রতিবেশী। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোয় ভালো। আর্থিক অভাবের মধ্যে বহু কষ্টে পড়াশুনো করেছে। খেলাধুলোর জগত থেকে অনেকেই চাকরি পান। রাজ্য পুলিস বা রাজ্য সরকারের কোনও চাকরি যদি সে পায় তাহলে আগামী দিনে তার হাত ধরে ঝাড়গ্রামের খেলাধুলোর জগতে অনেক উন্নতি হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)