• ‘রাতে বড়লোকদের একাংশের মিছিল, প্রাণ ওষ্ঠাগত গরিবের’, হাসপাতালে এসে বলছেন রোগীর পরিজনরা
    বর্তমান | ২৫ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: টানা অচলাবস্থা চলতে থাকায় গত সপ্তাহে অনেকেই আর জি কর হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসেননি। শুক্রবার থেকে ধীরে ধীরে রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। শনিবারও আর জি করের ওপিডিতে ভালো ভিড় চোখে পড়ল। তবে রোগীর আত্মীয়-পরিজনরা এভাবে দিনের পর দিন রাতের বেলা আন্দোলনকে সমর্থন করছেন না। তাঁদের বক্তব্য, ‘লোকজন ঠান্ডা ঘরে চাকরিবাকরি সেরে রাত হলে মোমবাতি হাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে। এই  একাংশের বড়লোকদের জন্য আমাদের মতো গরিব মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আসলে সবকিছুতেই রাজনীতি ঢুকে পড়েছে।’ এই অবস্থায় গরিব মানুষকে ভরসা জোগাচ্ছে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি না নিলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন অনেকে। 

    চিকিৎসকদের একাংশের আন্দোলনের জেরে কেষ্টপুরের প্রদীপ সাধুখাঁর বাইপাস সার্জারি আটকে রয়েছে। শনিবার তিনি ডাক্তার দেখাতে পারলেও বললেন, ‘আমার বাইপাস যে ডাক্তারবাবু করবেন, তিনি আজ দেখবেন বলেছিলেন। তার আগে আমার কয়েকটা পরীক্ষা করানোর ছিল। তার জন্য গত সপ্তাহে ডেট পেয়েছিলাম। কিন্তু ঝামেলা চলছে বলে আসিনি। এখন দেখছি শুধু রাজনীতি হচ্ছে।’ প্রদীপবাবুকে নিয়ে এসেছিলেন তাঁর জামাই বৈদ্য মান্না। বৈদ্যবাবু একটি ছোট খাবারের দোকান চালান। তিনি বলছিলেন, ‘প্রতি রাতেই দেখছি, কেউ না কেউ মোমবাতি হাতে বেরিয়ে পড়েছেন। আমরাও দোষীদের চরমতম শাস্তি চাই। কিন্তু এভাবে প্রতিদিন যাঁরা বেরচ্ছেন, তাঁদের সবারই চাকরি আছে। আমাদের রুজি-রুটির জন্য বেরতে হয়। সারাদিন কাজকর্মের পর রাতে বাড়ি ফেরার পথে বাসে বসে থাকতে হলে কার ভালো লাগে বলুন তো! যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা তো বেসরকারি নার্সিং হোমে চিকিৎসা করিয়ে নেবেন। আমরা তা পারি না।’ একই মত আর জি করের এক অ্যাম্বুলেন্স চালক মহম্মদ জাহাঙ্গীরের। তাঁর কথায়, ‘এবার তো পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়া দরকার। প্রতিদিন সকাল থেকে শুধু প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে। আমাদের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।’  

    এসএসকেএম হাসপাতালে এদিনও ভোগান্তির চিত্র ধরা পড়েছে। প্রতি মাসে স্বামীর শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা করাতে এখানকার আউটডোরে আসতে হয় বাসন্তীর গৃহবধূ রমা শিটকে। তিনি বলছিলেন, ‘আগে আউটডোরে ভোরবেলা লাইন দিলে ১২টার মধ্যে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে বেরিয়ে যেতাম। আজ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হল। আমরা তো দোষীদের শাস্তি চাই। আমারও মেয়ে আছে। তার জন্য চিন্তা হয়। কিন্তু চিকিত্সকরাই রোগীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আমরা কীভাবে বাঁচব?’ 
  • Link to this news (বর্তমান)