• বৈধ বাজির প্রশিক্ষণ-লাইসেন্সে ফের খুলবে না তো অবৈধ পথ?
    এই সময় | ২৫ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়: সবুজ বাজি বিষয়টি নতুন। যে সব বাজি পুড়লেও বাতাসে অনেকটা কম দূষণ ছড়ায় বহু যুগ ধরে চলে আসা সাধারণ বাজির তুলনায়, সেগুলোই সবুজ বাজি। মূলত তামিলনাড়ু এবং সেই সঙ্গে অন্য কিছু রাজ্যে সবুজ বাজি তৈরি হচ্ছে গত চার-পাঁচ বছর যাবৎ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে, সবুজ বাজি বা গ্রিন ক্র্যাকার অর্থাৎ বায়ু দূষণের নিরিখে পরিবেশবান্ধব বাজি ছাড়া গোটা দেশে অন্য সব বাজি নিষিদ্ধ।কিন্তু সবুজ বাজি বানাতে পারেন, এমন প্রস্তুতকারকের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গে প্রায় নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় সবুজ বাজি তৈরির জন্য রাজ্য সরকার প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার ব্যবস্থা করেছে। তবে তা নিয়েও এ বার প্রশ্ন উঠে গেল। ঠিক হয়েছে, যাঁরা ওই প্রশিক্ষণ নেবেন, তাঁদের দেওয়া হবে সবুজ বাজি তৈরির লাইসেন্স। আশঙ্কা ও প্রশ্ন প্রধানত এখানেই— ওই লাইসেন্স আবার বেআইনি বাজি তৈরির রাস্তা খুলে দেবে না তো?

    কর্মশালায় এখনও পর্যন্ত যে ১৭০ জন বাজি শ্রমিককে ডাকা হয়েছে, তাঁরা সবাই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার। যদিও রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য, পরবর্তী সময়ে অন্য জেলাগুলোর বাজি শ্রমিকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বাজি নির্মাতাদের একাংশের অভিযোগ, এক বাজি ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতাতেই ডাক পেয়েছেন ওই বাজি শ্রমিকরা। গত এক বছরে পূর্ব মেদিনীপুরে বেআইনি বাজি কারখানাগুলোয় একাধিক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

    আর গত কয়েক বছরের ঘটনা ধরলে রাজ্যে বেআইনি বাজি কারখানাগুলোয় বিস্ফোরণে প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ২০ জনের। বাজি প্রস্তুতকারকদের অনেকেরই আশঙ্কা, সবুজ বাজির লাইসেন্স পেয়ে ফের তৈরি হবে শেল-এর মতো নিষিদ্ধ বাজি। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর আগে একাধিক বার প্রমাণ মিলেছে যে, নিষিদ্ধ শেল তৈরি হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন কারখানায়।

    অভিযোগ, বড়বাজারের কয়েক জন ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সেগুলো বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই, উত্তরবঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতেও। লাইসেন্সের অপব্যবহার হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা রাজ্যের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) দপ্তরের কাছে অভিযোগ জানাতে চলেছে বাজি কারবারের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি সংগঠন।

    দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে সবুজ বাজির ক্ষেত্রে নিয়মটা আরও কঠিন। কারণ, এ রাজ্যে সবুজ বাজিকে হতে হবে শব্দহীন। তার উপর, বেআইনি বাজি কারখানাগুলোয় বিস্ফোরণ ও তার জেরে প্রাণহানির বেশ কিছু ঘটনায় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানেই বেরিয়েছে যে, বাজির আড়ালে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা, উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের বেআইনি বাজি কারখানায় মারণ বোমা বা পেটো বোমা তৈরি করা হতো। বিস্ফোরণের পর ওই সব কারখানায় মিলেছিল নিষিদ্ধ রাসায়নিক পটাশিয়াম ক্লোরাইড। যার সঙ্গে বাজির মশলার দূরেরও কোনও সম্পর্ক নেই।

    বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মতো পরিবেশকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি তুলেছেন, এই মৃত্যুমিছিল আটকাতে হলে বেআইনি বাজি কারখানাগুলো অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। যদি কোনও বাজি কারখানার আদৌ লাইসেন্স থাকে, সেগুলোর উপর থাকুক কড়া নজরদারি। প্রতিটি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পরেই প্রমাণিত হয়েছে যে, ওই কারখানাগুলোয় কোনও নজরদারি ছিল না। এ রাজ্যে সবুজ বাজির কোনও পূর্ণাঙ্গ কারখানা নেই বলে প্রশাসনের একাংশের দাবি।

    এ বার কর্মশালার জন্য যে ১৭০ জন বাজি শ্রমিককে নির্বাচন করা হয়েছে, বাজি তৈরির কোনও লাইসেন্স আগে কখনও তাঁদের আদৌ ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দুই ২৪ পরগনার বাজি প্রস্তুতকারকদের অনেকে।

    এমএসএমই দপ্তরের অধিকর্তা পার্থ চৌধুরী বলেন, ‘কয়েক দফায় এই প্রশিক্ষণ হবে। পরবর্তী সময়ে ডাকা হবে অন্য জেলাগুলোর বাজি নির্মাতাদেরও।’ তাঁক বক্তব্য, ‘এ ক্ষেত্রে নিয়ামক সংস্থা নিরি (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট) কেবল সবুজ বাজির লাইসেন্স দেবে। সেই লাইসেন্স ব্যবহার করে অন্য বাজি তৈরি করা যাবে না।’ তিনি জানান, বাজি তৈরিতে নজরদারির বিষয়টি জেলাগুলোর পুলিশ-প্রশাসনের দেখার কথা।
  • Link to this news (এই সময়)