এই সময়, কোচবিহার: গবাদি পশুরা যাতে এ দেশ থেকে পড়শি দেশে ঢুকে পড়তে না পারে, সেই উদ্দেশ্যে কোচবিহারে বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছিল বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স)। সেই কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর বিরুদ্ধে। বাংলাদেশি নাগরিকদের একাংশও এ কাজে বাধা দেন বলে অভিযোগ।এ নিয়ে কোনও হিংসা, অশান্তির ঘটনা না ঘটলেও আপাতত বেড়া তৈরি বন্ধ আছে বলে জানা গিয়েছে। বাংলাদেশের লালমণির হাটের দহগ্রাম ও কোচবিহারের তিনবিঘা সীমান্তে ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার সন্ধেয়। সূত্রের খবর, আগামী অক্টোবরে দিল্লিতে দুই বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেলদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
ঘটনাটা কী? বিজিবি-র অভিযোগ, বাংলাদেশি ভূখণ্ডের হাজিপাড়া এলাকার জমির উপর দিয়ে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া তৈরির চেষ্টা করে। মঙ্গলবার তিনবিঘা ও দহগ্রামের মধ্যে খোলা সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতার-সামগ্রী মজুত করতে দেখা যায় বিএসএফ জওয়ানদের৷
বুধবার বিএসএফ-এর কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই সেখানে বেড়া তৈরি শুরু হয়। দহগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের নজরে আসে ঘটনাটা৷ তাঁরা বিজিবি-র কাছে অভিযোগ জানান৷ বিজিবি-র উচ্চপদস্থ কর্তারা খবর পেয়ে সীমান্তে পৌঁছন। এরপরে বিজিবি ও বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশের আপত্তিতে থমকে যায় বেড়া তৈরির কাজ৷
বিএসএফ-এর রানিনগর সেক্টরের একটি সূত্রে খবর, সীমান্ত দিয়ে গবাদি পশু যাতে পাচার না হয়, তাই খোলা সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে ঘেরার নির্দেশ পান জওয়ানরা। এ নিয়ে ওই সেক্টরের কর্তারা অবশ্য সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করতে চাননি৷ তবে জানা গিয়েছে, তিনবিঘা-দহগ্রাম সীমান্তে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে বিএসএফ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাহিনীর এক কর্তা বলেন, ‘কোনও বর্ডার-ফেন্সিং হচ্ছিল না। এক দেশের গবাদি পশু যাতে অন্য দেশে চলে না যায়, তা নিশ্চিত করতেই কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হচ্ছিল। কারণ, এ নিয়ে হামেশাই দু’প্রান্তের গ্রামবাসীদের মধ্যে গোলমাল তৈরি হয়।’
আর এক অফিসার জানান, ২০১২-র একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভিত্তিতেই ওই ‘ক্যাটল ফেন্স’ তৈরি করা হচ্ছিল। তিনিই অক্টোবরের ওই বৈঠকের কথা জানান। পাশাপাশি বলেন, ‘সীমান্তের দু’পাশেই কোনও অশান্তি নেই। তবে দুই বাহিনীই প্যাট্রলিং বাড়িয়েছে।’
দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধানরা ৪,০৯৬.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বর্ডার নিয়ে আলোচনার জন্য বছরে দু’বার বৈঠক করেন। শেষ বৈঠকটি গত ৫ মার্চ হয়েছে বাংলাদেশে। তবে অক্টোবরের মিটিংয়ের নির্দিষ্ট দিন বিজিবি এখনও জানায়নি বলেই খবর।
৫ অগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে কূটনৈতিক মহলের নজর দুই পড়শি দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের দিকে। হাসিনা আপাতত ভারতেই রয়েছেন। বহু বাংলাদেশি, বিশেষত হাসিনার দল আওয়ামি লিগের বহু সমর্থক-সদস্য দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসার চেষ্টা করছেন।
যার জেরে নিরাপত্তা আঁটসাঁট করেছে বিএসএফ। সম্প্রতি গবাদি পশু পাচার রুখতে গিয়ে বাংলাদেশের জল সীমান্তে ঢুকে পড়া ভারতীয় এক নৌকোর পাঁচ আরোহীকে ধরেছে বিজিবি। তাঁদের দেশে ফেরাতে অস্বীকার করা হয়েছে। ওই পাঁচ জন বিএসএফ-কেই সহযোগিতা করছিলেন। এখনও বাংলাদেশের জেলে বন্দি তাঁরা।