শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: সরকারি স্কুলের পড়ুয়াদের পোশাক বানিয়ে সর্বস্বান্ত ফরাক্কার গৃহবধূ। অভিযোগ, দুবছর কেটে গেলেও মেলেনি পুরো টাকা। যার জেরে দেনার দায়ে ডুবেছেন পোশাক তৈরির বরাত পাওয়া মহিলা। টাকা পেতে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখলেন তিনি। পাশাপাশি জেলাশাসক, ডিপিও ও জঙ্গিপুর মহকুমা শাসকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগও দায়ের করেছেন। যদিও ঘটনা প্রসঙ্গে ফরাক্কা ব্লকের বিডিও জুনায়েদ আহমেদ জানিয়েছেন, “স্কুলের পোশাক তৈরির জন্য কোনও এজেন্সি বা সংস্থাকে বিডিও দপ্তর থেকে কখনও কোনও বরাত দেওয়া হয়নি।”
রাজ্য সরকারের সমস্ত প্রাথমিক, আপার প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র ও মাদ্রাসায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রদের প্রতি শিক্ষা বর্ষে হাফ অথবা ফুল জামা ও হাফ অথবা ফুল প্যান্ট এবং মেয়েদেরকে দেওয়া হয় স্কার্ট-জামা অথবা চুড়িদার, ওড়না ও প্যান্ট। প্রত্যেকটি স্কুল ইউনিফর্মে থাকে বিশ্ব বাংলার লোগো। ২০২২ সালে ফরাক্কা ব্লকের নয়টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত বেওয়া-১, বেওয়া-২, বাহাদুরপুর, মহেশপুর ও মহাদেবনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ২৮টি স্কুলের ২৯ হাজার ৮৩৯ জন ছাত্রছাত্রীদের পোশাক তৈরির বরাত দেওয়া হয় বলে দাবি। ফরাক্কা ব্লকের বিডিও-র নির্দেশে লিখিতভাবে পাঁচটি সংঘের আবিয়ান এন্টারপ্রাইজ সংস্থাকে এই বরাত দেওয়া বলে অভিযোগ।
স্কুল পোশাক তৈরির লিখিত অর্ডার পাওয়ার পর ২০ জন কারিগর প্রায় ৬ মাস নিউ ফরাক্কা জাতীয় সড়কের ধারে ফরাক্কা ব্লকের পূর্ত দপ্তরের অতিথি নিবাস ‘পথের সাথী’তে অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রায় ২৯ হাজার ৮৩৯ টি পোশাক তৈরি করে পাঁচটি সংঘের হাতে তুলে দেওয়া হয় । আবিয়ান এন্টারপ্রাইজ সংস্থার কণর্ধার শাহানাজ চৌধুরী জানান,” প্রত্যেকটি পোশাক সেলাই করার জন্য সরকারের তরফ থেকে ২৫৪ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছিল। ২৯ হাজার ৮৩৯ টি পোশাক সেলাই করার জন্য সরকারের কাছ থেকে আমাদের প্রাপ্য প্রায় ৭৫ লক্ষ ৭৯ হাজার টাকা। ২০২২ শিক্ষাবর্ষ পার হয়ে আরও দুটো শিক্ষাবর্ষ কাটতে চললেও এখনও পর্যন্ত ৪৮ লক্ষ ৬২ হাজার ৮ টাকা দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে মাত্র ২৭ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৮ টাকা। পোশাক তৈরি করার জন্য কারিগরদেরকে মজুরি ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে হয়েছে। এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ধার করতে বাধ্য হয়েছি। বর্তমানে আমি দেনার ডায়ে ডুবে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার মুহূর্তে আর অন্য কোনও পথ নেই। পোশাক সেলাইয়ের বকেয়া টাকা পাওয়ার জন্য একাধিকবার ফরাক্কার বিডিও-সহ অন্য আধিকারিকদের কাছে দরবার করেও কোনও সুরাহা হয়নি। বাধ্য হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, জেলাশাসককে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। পাশাপাশি হাই কোর্টের উকিলের চিঠি বিডিওকে পাঠিয়েছি।”
যদিও ফরাক্কার বিডিও জুনায়েদ আহমেদ জানান,”২০২২ সালের স্কুল পোশাক তৈরির জন্য সমস্ত সংঘ গুলোকে তাদের প্রাপ্য অর্থ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। সংঘগুলো কাকে বরাত দিয়ে সেই পোশাক তৈরি করেছিল সে বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।” এই প্রসঙ্গে উওর মুর্শিদাবাদ বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সহসভাপতি মিলন ঘোষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ,”এটি একটি নতুন ধরণের দুর্নীতি। জেলা প্রশাসনকে অন্ধকারে রেখে সরকারি ভবনে বসে কেউ ছমাস ধরে স্কুল পোশাক তৈরি করতে পারে না। বিডিও , সংঘ এবং এজেন্সি-র মধ্যে কী চুক্তি হয়েছিল তার তদন্তর দাবি জানাছি।”