কিছু জুনিয়র ডাক্তার চান কাজে ফিরতে, তবু অব্যাহত কর্মবিরতি
এই সময় | ২৬ আগস্ট ২০২৪
এই সময়: জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ আন্দোলন ছেড়ে কাজে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে নিমরাজি হলেও বড় অংশের চাপে তাঁরা কর্মবিরতি ছেড়ে বেরোতে পারছেন না— আরজি করের নৃশংস ঘটনার দু’সপ্তাহ পরে এমনটাই জানা যাচ্ছে আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে। সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধেয় আরজি করের জুনিয়র ডাক্তারদের কয়েকজন হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে তাঁরা কাজে ফিরতে চান বলে জানিয়েছেন।যদিও জুনিয়র ডাক্তারদের একটা বড় অংশই এখনও এ ব্যাপারে সহমত না-হওয়ায় তাঁরা কাজে ফিরতে পারছেন না। সিনিয়র ডাক্তারদের একাধিক সংগঠনও মনে করছে, যে হেতু ধর্ষণ-খুনে দোষীদের শাস্তি কবে হবে অথবা তদন্তের অগ্রগতি কোন পর্যায়ে রয়েছে, তার সুস্পষ্ট দিশা নেই এবং চিকিৎসকদের নিরাপত্তার স্বার্থে তেমন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপও সর্বত্র দেখা যাচ্ছে না, সেখানে জুনিয়রদের কাজে ফেরার কথা তাঁরা বলবেন কোন মুখে!
ফলে রাজ্য প্রশাসন, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বারংবার বার্তার পরেও কর্মবিরতি চলছেই। জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে না ফেরায় আজ, সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে ফের একপ্রস্ত রোগী ভোগান্তির আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য দপ্তর। সূত্রের দাবি, চলতি অচলাবস্থা কাটাতে অচিরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৈঠকে ডাকতে পারেন সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তারদের।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা রবিবার দুপুরে একটি সাংবাদিক বৈঠক আয়োজন করেন। জারি করা হয় একটি প্রেস বিবৃতিও। তাতে বলা হয়, তাঁদের আন্দোলনের মূল দাবি হলো গত ৯ অগস্ট আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ন্যায়বিচার। কিন্তু আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, সরকারি স্বাস্থ্য প্রশাসন ব্যবস্থার অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা যে দুষ্ট চক্রের জন্য আরজি করে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটল ও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলো, সেই চক্রের লোকজনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে।
অন্যথায় উঠবে না কর্মবিরতি। এই চক্রে সন্দীপ ঘোষের পাশাপাশি আরও কয়েক জন কর্তার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করেছে সিনিয়র ডাক্তারদের একাধিক সংগঠনও।
শনিবার স্বাস্থ্যভবনে আয়োজিত অচলাবস্থা কাটানোর বৈঠকে বিভিন্ন চিকিৎসক ও সংগঠনের পাশাপাশি আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফোরামকেও। কিন্তু এত বড় একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা কাটাতে কোনও রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যেতে অস্বীকার করে জুনিয়র ডক্টর্স ফোরাম। তাদের মূল দাবি, আসল দোষীদের চিহ্নিতকরণ এবং খুন-ধর্ষণের মোটিভ জানাতে হবে।
তা না হলে আসল দোষীরা হয়তো এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে তাঁরা কেউই নিরাপদ নন। দ্বিতীয়ত, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের ঘটনা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত প্রত্যেককে চিহ্নিত করে তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। এই দাবিতে আজ, সোমবার আন্দোলনকারীরা একটি গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, স্বাস্থ্যভবনের প্রত্যক্ষ মদতে যে দুষ্টচক্র এতে সক্রিয় ছিল, তাদের কাউকে আড়াল করা চলবে না। তাই সন্দীপ ঘোষকে সাসপেন্ড করার দাবি তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। ১৪ অগস্ট মাঝরাতে ভাঙচুরের ঘটনার দায়স্বীকার করে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগও দাবি করেছেন তাঁরা। মোটের উপর তাঁদের এই বক্তব্যকে সমর্থন করছে ছ’টি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ থেকে শুরু করে সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম এবং মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের মতো সিনিয়র ডাক্তারদের সংগঠনগুলিও।
শনিবার তাঁরা সকলেই আমন্ত্রিত ছিলেন স্বাস্থ্যভবনে। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, কয়েক জনকে অপসারণ ছাড়া রাজ্য সরকারের তরফে বড় কোনও মাথাকে সরিয়ে দেওয়া কিংবা নিরাপত্তার স্বার্থে জোরদার কোনও পদক্ষেপ এখনও দেখা যায়নি।
এমনই সন্ধিক্ষণে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় উত্তরবঙ্গ লবির নেতৃত্বে সিন্ডিকেট চলছে বলে পোস্টার পড়ল কলকাতা মেডিক্যাল, এনআরএস, ন্যাশনাল-সহ একাধিক মেডিক্যাল কলেজ, হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং খাস স্বাস্থ্যভবনেও। সেখানে অভিযোগ, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় দীর্ঘ দিন ধরে সিন্ডিকেট চলছে।
আর সেই সিন্ডিকেটে কারা কারা জড়িত, মূল পান্ডা কে বা কারা, তাঁদের নাম-ছবিও ছাপা হয়েছে সেই পোস্টারে। সেখানে উত্তরবঙ্গের এক বেসরকারি অর্থোপেডিক চিকিৎসকের নামও রয়েছে। সিনিয়র ডাক্তারদের একটা বড় অংশের মতোই এই লবির মাথাদের বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভ আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের।