• 'প্রেসক্রিপশনে ধর্ষণ লিখুন', হুমকি লেডি ডাক্তারকে, ধৃত যুবক
    এই সময় | ২৬ আগস্ট ২০২৪
  • এই সময়, কালনা: আরজি করে তরুণী চিকিৎসক খুনের ঠিক পরেই পূর্ব বর্ধমানের ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এক যুবককে। মিছিলে মিছিলে জেরবার রাজ্য আর জুনিয়র ডাক্তারদের টানা কর্মবিরতির মাঝেও ফের কর্তব্যরত এক মহিলা চিকিৎসককে শ্লীলতাহানির হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল পূর্বস্থলী গ্রামীণ হাসপাতালে।ওই চিকিৎসকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ নারায়ণ দাস (৩৩) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, 'চিকিৎসককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।' এই ঘটনায় এ বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর নিরাপত্তাও। ব্লক লেভেলে চিকিৎসা করা ডাক্তারদের বক্তব্য, জেলার বেশ কিছু গ্রামীণ হাসপাতালের অবস্থান নির্জন এলাকায়। নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা।

    এ প্রসঙ্গে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম বলেন, 'স্বাস্থ্য দপ্তর মহকুমা হাসপাতাল পর্যন্ত কোথায় কত সিকিউরিটি আছে তা জানতে চেয়েছিল। সেটা পাঠিয়ে দিয়েছি। ওই সব হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা, রুম, আলো ইত্যাদি নিয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে। সেটাও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে রবিবারই। তবে ব্লক হাসপাতালগুলোর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের কাছে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি।' যদিও ব্লক হাসপাতালেও পুলিশ থাকে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

    পূর্বস্থলীরই ঋষি ডাক্তারপাড়ার বাসিন্দা নারায়ণ দাসের বিরুদ্ধে সম্প্রতি তাঁর বাবা রামসুন্দর দাসও থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতে গত বুধবার নারায়ণকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বৃহস্পতিবার আদালতে পেশ করা হলে তিনি জামিন পান। এর পর শুক্রবার সন্ধ্যায় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পূর্বস্থলী ২ ব্লক হাসপাতালে যান নারায়ণ।

    হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে নারায়ণ জানান, তাঁর স্ত্রীকে বাবা ও পরিবারের লোকজন মারধর করেছে। বাবা স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টাও করে বলে নারায়ণ চিকিৎসককে জানান। চিকিৎসক পরীক্ষা করে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলে নারায়ণ স্ত্রীকে নিয়ে চলে যান। এর ঘণ্টা দুয়েক পরে ফের হাসপাতালে ফিরে আসেন নারায়ণ। সেখানে চিকিৎসকের কাছে নিজের দাবি মতো ধর্ষণ ও ইনজুরির রিপোর্ট লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন তিনি।

    হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাতে রাজি না হওয়ায় দলা পাকিয়ে ওই চিকিৎসকের মুখে প্রেসক্রিপশন ছুড়ে মারেন অভিযুক্ত যুবক নারায়ণ। এর পরেই গালিগালাজ করতে থাকেন অভিযুক্ত। এমনকী বাইরে বের হলে নারায়ণ ওই চিকিৎসকের শ্লীলতাহানি করার হুমকিও দেন বলে অভিযোগ। আতঙ্কিত চিকিৎসক শনিবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পূর্বস্থলী থানায়। অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে নারায়ণকে।

    পুলিশ বিএনএস আইনে ৭৪, ৭৯, ২১৭, ২২৪, ৩৫১ (৩) ধারায় মামলা রুজু করে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে। রবিবার ধৃতকে পেশ করা হয় কালনা মহকুমা আদালতে। আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে নারায়ণ বলেন, 'বাবা-মা পরিবারের লোকজন স্ত্রীকে মারধর করেছিল। হাসপাতালে আনার পর ওই চিকিৎসক ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন। আমার উকিল সেটা দেখে বলেন, এতে কাজ হবে না। তাই আমি আবার গিয়েছিলাম প্রেসক্রিপশন ঠিক করাতে। এটুকুই ঘটেছে। প্রয়োজনে সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করা হোক। আমার অন্যায় থাকলে শাস্তি দিক।'

    হাসপাতালের বিএমওএইচ শুভ রায় বলেন, 'সিসিটিভি কামেরা থাকলেও তাতে ভয়েস রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ওই মহিলা চিকিৎসক মৌখিক ভাবে আমাকে যা জানিয়েছেন, তাতে ওই ব্যক্তি এসেছিলেন ইনজুরি রিপোর্ট লেখানোর জন্য। উনি চাইছিলেন, ওঁর দাবি মতো ইনজুরি রিপোর্ট লিখে দেওয়া হোক। কিন্তু সেটা কখনই সম্ভব নয়। উনি মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। তার ভিত্তিতেই থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।'
  • Link to this news (এই সময়)