এই সময়, আসানসোল: ডিপোয় দাঁড়িয়ে থাকা বাস হঠাৎই চলতে শুরু করল। আশপাশে হাজির জনতা অবাক চোখে দেখলেন, সেই বাসে নেই কোনও চালক! এর পর ডিপোর গেট ভেঙে রাস্তায় এসে বাসটি ধাক্কা মারে পর পর তিনটি মোটরবাইকে। রাস্তার ডিভাইডার টপকে পাশের লেনে গিয়ে শেষে বাসটি থামে রাস্তা লাগোয়া নর্দমায়।বাসটিকে থামতে দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলেন সেখানে উপস্থিত লোকজন। রবিবার দুপুরে আসানসোলের সেন র্যালে রোডের জুবিলি মোড় সংলগ্ন এসবিএসটিসি-র বাস ডিপোয় এমন ঘটনা দেখে অনেকেই তাৎক্ষণিক ভাবে ভূতুড়ে কাণ্ড বলে মনে করেছেন। অনেকে আতঙ্কে চিৎকারও করে ওঠেন।
তবে এই দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। যদিও বাসটির ধাক্কায় দু’টি মোটরবাইক সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। তৃতীয় মোটরবাইকটির হাতল ভেঙে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাসটিকে ও ভাবে ছুটে আসতে দেখে মোটরবাইক চালকরা প্রাণভয়ে দৌড়ে এলাকা ছাড়েন। স্থানীয়দের বক্তব্য, রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় লোক চলাচল ছিল তুলনায় কম। তার উপর দুপুরে রাস্তায় গাড়ির যাতায়াত প্রায় ছিল না বললেই চলে।
উল্টো দিকে থাকা আসানসোল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এ দিন বন্ধ থাকায় প্রতিদিনের মতো ছাত্র-ছাত্রীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন না। খবর পেয়ে আসানসোল উত্তর থানা ও ট্র্যাফিক গার্ড থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে আসে। বেশ কিছুক্ষণের জন্যে সেন র্যালে রোডে বন্ধ হয়ে যায় গাড়ি চলাচল। পরে পুলিশ ক্রেন দিয়ে বাসটিকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
এই ঘটনার পরে বেহাল সরকারি বাসের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ক্ষতিগ্রস্ত একটি মোটরবাইকের মালিক শ্রীকান্ত মাজি বলেন, ‘আমি ডিপোর সামনে মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি, ডিপোর ভিতর থেকে একটি বাস এগিয়ে আসছে। দিশাহীন ভাবে ছুটতে থাকা বাসটিকে দেখে বুঝতে পারি, তাতে চালক নেই। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ডিপোর তালা লাগানো গেট ভেঙে রাস্তার দিকে চলে আসে বাসটি। আমরাও পড়িমরি করে ছুটে কোনওরকমে প্রাণ বাঁচাই।’
জানা গিয়েছে, বাসটি হাওড়া ডিপো থেকে এসেছিল। বিকেল সাড়ে তিনটির সময়ে বাসটির আসানসোল থেকে কলকাতা ফেরার সময় ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বাসটি আসানসোলের জুবিলি মোড় সংলগ্ন এসবিএসটিসি ডিপোয় পৌঁছয়। পরে তদন্তে জানা গিয়েছে, বাসটির চালক ও কন্ডাক্টর খেতে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে বাসে কেউ ছিলেন না।
প্রশ্ন উঠেছে, চালকহীন অবস্থায় বাসটি চালু হয়ে গেল কী করে? তাহলে কি বাসে বড়সড় টেকনিক্যাল ত্রুটি ছিল? এসবিএসটিসি-র স্থানীয় এক আধিকারিক জানান, ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
অন্য দিকে, ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি মোটরবাইকের মালিক অভিযোগ দায়ের করেছেন আসানসোল উত্তর থানায়। তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে আসানসোল পুরসভার স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার শ্রাবণী মণ্ডল বলেন, ‘ঘটনার সময়ে আমি ওখানে ছিলাম না। খবর পেয়ে এসেছি। জানতে পারি, চালক ছাড়াই ডিপো থেকে বাসটি নিজে থেকে চালু হয়ে যায়। পরে গেট ভেঙে বেরিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি মোটরবাইকে ধাক্কা মারে। ছুটির দিন থাকায় বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি।’