• লেখাপড়া না জানা ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপক দুখু মাঝিকে উপদেষ্টা হতে প্রস্তাব বনদপ্তরের
    বর্তমান | ২৬ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: স্কুলের গণ্ডি মাড়াননি কোনও দিন। তা নিজে মুখেই স্বীকার করেন। তবে পেটে তথাকথিত বিদ্যা না থাকলেও এই পৃথিবী রক্ষায় তিনি যা করে চলেছেন, তা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে শিক্ষনীয়। তাই তাঁর জ্ঞানকেই সম্বল করতে চলেছে বনদপ্তর। বনসৃজন প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পুরুলিয়ার ‘গাছদাদু’ তথা ‘পদ্মশ্রী’ প্রাপক দুখু মাঝির পরামর্শ চাইল বনদপ্তর। শনিবার দুখু মাঝির বাড়িতে গিয়ে তাঁকে বনদপ্তরের উপদেষ্টা হতে প্রস্তাব দেওয়া হয়। 

    শনিবার বাঘমুণ্ডির সিন্দরি গ্রামে দুখু মাঝির বাড়ি যান পুরুলিয়া বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ, জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ জয়মল ভট্টাচার্য, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হংশেশ্বর মাহাত প্রমুখ। তাঁরাই দুখু মাঝিকে বনদপ্তরের ‘পরামর্শদাতা’ হওয়ার প্রস্তাব দেন। ডিএফও সাহেবের অনুরোধ, ‘বিভিন্ন চারাগাছ তৈরি করতে আপনি যদি আমাদের একটু সাহায্য করেন তাহলে আমরা খুবই উপকৃত হতাম। আপনি কি আমাদের সহযোগিতা করবেন?’ বিন্দুমাত্র না ভেবেই দুখুর উত্তর, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই করব। এটাই তো আমার একমাত্র নেশা।’

    দুখুবাবুর বয়স ৮০ ছুঁইছুঁই। পুরুলিয়ার প্রতিটা মানুষই শুধু নয়, খোদ দেশের রাষ্ট্রপতিও জানেন, তাঁর একমাত্র নেশা, বৃক্ষরোপণ করা। সেই ১২ বছর বয়সে কোনও এক সাহেবের থেকে শুনেছিলেন, গাছ অক্সিজেন দেয়। গাছ লাগালে মানব সভ্যতা বেঁচে থাকবে। গরমের হাত থেকে পৃথিবী রক্ষা পাবে। পাখিরা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। কিশোর বয়সে সেই সব কথা মাথায় গেঁথে গিয়েছিল দুখুর। সেই শুরু। এখনও প্রতিদিন সকাল হলেই সাইকেলে গাছের চারা, কোদাল, গাঁইতি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বৃদ্ধ। বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, বাঘমুণ্ডির রাস্তা-ঘাট জঙ্গলে যে সমস্ত বড় বড় গাছ দেখা যায়, তার অধিকাংশই দুখু মাঝির হাতে লালিত-পালিত। 

    বনদপ্তর সূত্রের খবর, পুরুলিয়ায় পর্যটকরা বেড়াতে এসে অনেক সময় পলাশের চারার খোঁজ করেন। নানা ঔষধী গাছ নিয়ে জানতে চান। বনদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, গাছ সম্পর্কে দুখু মাঝির জ্ঞান অসীম। কোনগাছে কি ঔষধী গুণ আছে, তা দুখু মাঝির চেয়ে পুরুলিয়ার আর কে ভালো জানেন! তাই তাঁর অভিজ্ঞতাকে আমরা কাজে লাগিয়ে পলাশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঔষধী গাছের নার্সারি তৈরি করতে চাইছি।  ডিএফও পঙ্কজ গুহ বলেন, দুখু মাঝি আমাদের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন। শীঘ্রই আমরা যৌথভাবে কাজ শুরু করব। তবে, যতই পদ্মশ্রী পান, আর বনদপ্তরের উপদেষ্টার পদ, দুখুবাবুর মন পড়ে সেই তাঁর ভাঙাচোড়া দরমা দেওয়া ত্রিপলের ছাউনির বাড়িতেই। শনিবারও বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য আর্জি জানান আধিকারিকদের। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হংশেশ্বর মাহাত বলেন, কীভাবে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হচ্ছে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)