• ওজন ১৯০ কেজি! রক্তদানের মহৎ কর্মে শামিল হতে পেরে গর্বিত গোয়ালতোড়ের সৌরদীপ শিট
    বর্তমান | ২৬ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: ‘দেহের একটু রক্ত দিলে যদি বাঁচে একটি প্রাণ, ধন্য হবে জনম তোমার, মহৎ তোমার দান।’-এই মহান কর্মেরই শরিক হতে চেয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের সৌরদীপ শিট। নিজের জেলা ছাড়িয়ে আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় যখনই রক্তদানের ক্যাম্পের খোঁজ পেয়েছেন, তখনই ছুটেছেন। কিন্তু, প্রতিবারই জুটেছে একরাশ নিরাশা। কারণ একটাই, তাঁর স্থূলতা। বছর পঁচিশের সৌরদীপের ওজন যে প্রায় ২০০ কেজি! হাতের শিরা খুঁজে পাওয়া যাবে না, এই বলে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাঁকে বারবার ফিরিয়েছেন। এতে কিছুটা হীনমন্যতায় ভুগলেও হাল ছাড়েননি। সেই স্বপ্ন পূরণ হল শনিবার। বিষ্ণুপুরে রক্তদান করতে পেরে বেজায় খুশি সৌরদীপ।

    বর্তমান সময়ে এখনও অনেকেই রক্তদান করার নাম শুনলেই পিছিয়ে আসেন। নানা বাহানা দিয়ে শিবির এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, সৌরদীপ বিভিন্ন শিবিরে ঘুরেও রক্ত দিতে পারছিলেন না। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষ্ণুপুরে বড় আকারের রক্তদানের খবর পেয়েই বাড়ি থেকে রওনা দেন। বাসে চেপে এসে পৌঁছন শিবিরে। লক্ষ্য একটাই দিতে হবে রক্ত। এদিন তাঁর বহুদিনের ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। খাতড়া ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা সৌরদীপের রক্ত একবারেই সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। এতেই সৌরদীপের মুখে দেখা যায় যুদ্ধ জয়ের হাসি। আর উদ্যোক্তরাও এমন নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হতে পেরে বেজায় খুশি। তাঁরা এদিন সৌরদীপকে মঞ্চে তুলে সংবর্ধনা দেন।

    ওই ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার সুব্রত বিশ্বাস বলেন, রক্ত দেওয়ার আগে আমরা সৌরদীপের ওজন মেপেছি। ওর ওজন ১৯০ কেজি ছিল। তাতে রক্ত দিতে কোনও বাধা নেই। সেই জন্য ওর রক্ত নেওয়া হয়েছে।

    গোয়ালতোড়ের পাটদহ গ্রামে বাড়ি সৌরদীপের। বাড়িতে তাঁর মা, বাবা ও বয়স্ক ঠাকুমা রয়েছেন। বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পাশ সৌরদীপ বাড়িতেই টিউশনি পড়ান। বাবা গোপাল শিট পেশায় চাষি। মা মনিকাদেবী গৃহবধূ। জানা গিয়েছে, সৌরদীপ ছোট থেকেই হৃষ্টপুষ্ট। ধীরে ধীরে তাঁর ওজন অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। অথচ আর পাঁচটা সাধারণ লোকের মতোই খাওয়া দাওয়া করেন। রোজ সকালে মুড়ি খান। ওজন কমানোর জন্য আগে চিকিৎসকের পরামর্শে দুপুরে রুটি খেতেন। কিন্তু, তাতেও কোনও লাভ না হওয়ায় এখন দুপুরে তিন বাটি ভাত খান। বিকেলে চা ও সঙ্গে বিস্কুট এবং রাতে তিনটি রুটি। সৌরদীপের মা বলেন, আমাদের পরিবারে এত বেশি ওজন কারও নেই। সৌরদীপ স্বাভাবিক খাবারই খায়। অনেক চিকিৎসা করিয়েছি। এখনও চিকিৎসা চলছে। কিন্তু, লাভ কিছুই হয়নি। ওর ইচ্ছা ছিল রক্তদানের মতো মহৎ কাজে শামিল হওয়ার। কিন্তু, বারবার মন খারাপ করেই বাড়ি ফিরেছে। এদিন বিষ্ণুপুরে রক্তদানের শিবিরে যাওয়ার কথা বলতেই আমরা বাধা দিইনি।

    সৌরদীপ বলেন, ওজন দেখেই আমাকে বিভিন্ন শিবির থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাই মনের ইচ্ছা অপূর্ণই থেকেই গিয়েছিল। কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখি বিষ্ণুপুরে রবিবার বড় আকারে রক্তদান শিবির হবে। সেই মতো এদিন সকালে বাড়ির লোকেদের বলেই বাস ধরি। তবে চিন্তা হচ্ছিল। এখানেও ফিরিয়ে দেওয়া হবে না তো? কিন্তু, এখানে আমার ওজন পরীক্ষার পর স্বাস্থ্যকর্মীরা ডান হাত থেকে একবারেই রক্ত টানতে সক্ষম হন। দীর্ঘদিনের ইচ্ছে পূরণ হওয়ায় মুখে অনাবিল হাসি নিয়েই ক্যাম্প ছাড়লেন ‘ব্লাড ডোনার ফ্যাট ম্যান’। ( শিবিরে রক্ত দিয়ে বেরিয়ে আসছে সৌরদীপ শিট। নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)