• বাঁধ ভাঙতেই গ্রামের ১০০ মিটার দূরে বইছে গঙ্গা, ভাঙনে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা সামশেরগঞ্জের লোহরপুর
    বর্তমান | ২৬ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, জঙ্গিপুর: সামশেরগঞ্জে লোহরপুরে মাটির বাঁধ ভাঙতেই গ্রামের একশো মিটার দূরত্বে বইছে গঙ্গা নদী। এতেই বছর চারেক আগের ভয়াবহ ভাঙনের স্মৃতি তাড়া করছে সামশেরগঞ্জের লোহরপুরবাসীকে। আতঙ্কে চোখের ঘুম উবেছে প্রায় ২০০ পরিবারের। বছর চারেক আগে প্রতাপগঞ্জ, চাচণ্ড ও লোহরপুরে ভাঙনে কয়েক বিঘা চাষযোগ্য জমি এবং বহু বড় বড় গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। জমিজমা তলিয়ে গেলেও জনবসতি এলাকা থেকে কয়েকশো মিটার দূরে ছিল গঙ্গা। সেযাত্রায় বাড়িঘর বেঁচে যায়। ভাঙন রুখে যাওয়ায় আশায় বুক বাঁধছিলেন লোহরপুরের মানুষ। বিগত তিন বছর আর তেমন ভাঙনের কবলে পড়তে হয়নি তাঁদের। গঙ্গা অন্য এলাকায় তাণ্ডব চালালে গ্রামবাসীরা ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু লোহরপুরের মানুষ নিজের ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়েছিলেন। এবার তাঁদের সেই আশ্রয়টুকুও কেড়ে নিতে চলেছে সর্বগ্রাসী গঙ্গা।

    সামশেরগঞ্জ ব্লকের বিডিও সুজিতচন্দ্র লোধ বলেন, নতুন করে আর ভাঙনের খবর নেই এটা ভালো দিক। তবে নদীতে অনেকটাই জল বেড়েছে। মানুষজন সজাগ রয়েছেন। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে এলাকার পুরুষরা সবে কাজে বেরিয়েছিলেন। মহিলারা যে যার সংসারের কাজে মন দিয়েছেন। এমন সময় বাঁধের একাংশ নদীতে চলে যায়। তখনই মানুষ আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। বাঁধের কোল ঘেঁষে পরপর কয়েকটি পাকা বাড়ি ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই একে একে সব নদীতে তলিয়ে যায়। সফিক শেখ, মিলন শেখ ও রেক্সোনা বিবি সব হারিয়ে আজ পথে বসেছেন। এতল্লাটে আর তেমন বসত বাড়ি নেই। তবে নদী থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে ঘন বসতিপূর্ণ লোহরপুর গ্রাম। সেখানে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বাস। গ্রামের মানুষের কাছে বড় ভরসা ছিল মাটির বাঁধ। সেই বাঁধ লোহরপুর থেকে শিকদারপুর পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আতঙ্কের প্রহর গুনছেন লোহরপুরের বাসিন্দারা। এভাবে নদী ক্রমশ এগতে থাকলে গোটা গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সকলে। এলাকার মানুষের দাবি, এখনও যদি ভাঙন রোধের স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে গ্রামটি রক্ষা পেতে পারে।

    গ্রামবাসী মিলন শেখ বলেন, আগেই চাষের জমি ও আম, কাঁঠালের বড় গাছ নদীতে তলিয়ে গিয়েছে। বাড়িটিও পড়ে গেল। এখন স্কুলে বাচ্চা নিয়ে রয়েছি। এই অবস্থায় কোথায় যাব? প্রতাপগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আয়েশা বিবি বলেন, কয়েকটি বাড়ি বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় ছিল। সেগুলো পড়ে গিয়েছে। আর কিছুটা দূরেই মূল গ্রাম। ভাঙনের যা ভয়াবহ রূপ দেখছি, তাতে গোটা গ্রামই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। রাজ্য সরকার ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে। কেন্দ্র তার ভূমিকা পালন না করলে মানুষের দুর্গতির শেষ থাকবে না।
  • Link to this news (বর্তমান)