আর জি কর কাণ্ডের পরে রাজ্য জুড়েই বিভিন্ন স্তরের সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবিতে সরব হয়েছেন চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা। ওই ঘটনার বিচার চেয়ে নাগরিক আন্দোলনের মাত্রাও বাড়ছে। এই আবহে হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে তৎপর হয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। করা হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। তবে সে সবই মেডিক্যাল কলেজ বা জেলার সুপার স্পেশালিটি ও মহকুমা হাসপাতালের জন্য। গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে এখনও নিরাপত্তায় ভরসা দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোট ২০টি গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে। রয়েছে একটি ব্লক হাসপাতালও। ঘাটাল মহকুমার পাঁচটি ব্লকে আছে পাঁচটি গ্রামীণ হাসপাতাল। এই সব গ্রামীণ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়। ৩০ থেকে ৬০ শয্যার গ্রামীণ হাসপাতালে রোজই রোগীর ভিড় উপচে পড়ে।ঘাটালের বীরসিংহ বিদ্যাসাগর গ্রামীণ হাসপাতাল ও চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালের বহির্বিভাগে দিনে গড়ে ৩০০-৩৫০ জন রোগীর চিকিৎসা হয়। আর গড়ে ২৫-৩০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। মাঝেমধ্যে শয্যা সংখ্যার অতিরিক্ত রোগীও ভর্তি থাকেন। এ ছাড়াও টিকাকরণ-সহ নানা প্রয়োজনে বহু মানুষ রোজই গ্রামীণ হাসপাতালে আসেন।
গ্রামীণ এই হাসপাতালগুলিতে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নাইট ডিউটি করতে হয়। চিকিৎসকও অন-কল থাকেন। পরিকাঠামো সংক্রান্ত ঘাটতির পাশাপাশি এই গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে নিজস্ব নিরাপত্তার কোনও বালাই নেই। নিরাপত্তারক্ষী, সিসি ক্যামেরা নেই। থাকলেও ক্যামেরাও অচল। সহায় বলতে সিভিক। কোথাও দু’জন কোথাও আবার একজন সিভিক ভলান্টিয়ারই গোটা হাসপাতালের নজরদারি চালান। অথচ রোগী মৃত্যু বা পরিষেবায় গাফিলতির অভিযোগে গ্রামীণ হাসপাতালে মাঝেমধ্যেই ভাঙচুর, ঘেরাও, অশান্তির ঘটনা ঘটে।
বছর খানেক সরকারি স্যালাইন নিয়ে সমস্যার জেরে ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে দফায় দফায় ঘেরাও আন্দোলন হয়েছিল। তার আগে এক শিশু মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল পরিস্থিতি হয়েছিল চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে। এখন আর জি কর আবহে নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীর দাবিতে সরব হয়েছেন গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাঁদের দাবি, সারাদিন নানা ধরনের লোকের আনাগোনা তো আছেই। রাতের অন্ধকারে মদ্যপ ও অবাঞ্ছিতরাও হাসপাতাল চত্বরে ঢুকে পড়ে।
হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কয়েক বছর আগে শয্যা সংখ্যার অনুপাতে মেডিক্যাল কলেজ, সুপার স্পেশালিটি, জেলা হাসপাতাল এবং মহকুমা হাসপাতালে নিরাপত্তা কর্মী রাখার ঘোষণা হয়েছিল। সেই সময় গ্রামীণ হাসপাতালেও নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের ঘোষণা হয়েছিল। তবে তা কার্যকর হয়নি।গ্রামীণ হাসপাতালের এক চিকিৎসকের আক্ষেপ, “পান থেকে চুন খসলেই রোগীর আত্মীয়দের চোখরাঙানি সইতে হয়। মারধরও জোটে। পুলিশ পৌঁছনোর আগেই যা ঘটার ঘটে যায়। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?”
এ প্রসঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, “গ্রামীণ হাসপাতালগুলিতে সিভিক ভলান্টিয়ারেরা নজরদারি চালান। তবে এ বার পাঁচ জন করে নিরাপত্তা কর্মী দেওয়া হবে। তার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।”