আর জি করে চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়ে উত্তাল দেশ। নারীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দাবি উঠেছে রাজ্য জুড়ে।
এই আবহে আত্মরক্ষার পাঠ নিতে ক্যারাটে প্রশিক্ষণে মহিলাদের আগ্রহ বাড়ছে। শিশু থেকে গৃহবধু, স্কুল, কলেজের পড়ুয়ারা, সরকারি, বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত মহিলারাও ক্যারাটে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে ভিড় করছেন। জেলার বিভিন্ন ক্যারাটে প্রশিক্ষণ সংস্থা জানায়, বছরভর ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ বাড়ছিল। তবে আর জি করের ঘটনার পর অনেকেই ভর্তি হওয়ার জন্য ফোন করছেন তাদের কাছে। বহরমপুরের একটি ক্যারাটে প্রশিক্ষণ সংস্থার কর্মকর্তা সৈকত দাস বলেন, ‘‘বছরভর মহিলারা ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন। তবে আর জি করের ঘটনার পর বহু মহিলা, বিশেষ করে গৃহবধূ, পড়ুয়া, কর্মরত মহিলারা ফোন করছেন ভর্তি হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে। আমাদের সংস্থায় অন্তত ১৫ জন মহিলা গত কয়েক দিনে ভর্তি হয়েছেন। আরও অনেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ভর্তি হবেন শীঘ্রই।’’
আরেকটি সংস্থার কর্মকর্তা দেবাশিস মণ্ডল জানান, তাঁরা মুর্শিদাবাদ শহর, বহরমপুর, কান্দি, রঘুনাথগঞ্জ, ধুলিয়ান, সাগরদিঘি, লালগোলা-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্যারাটের প্রশিক্ষণ দেন। আর জি করের ঘটনার পরে বহু মহিলা ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নেবেন বলে তাঁদের ফোন করেছেন। ২০২২ সালে বহরমপুরের গোরাবাজারে সুইমিং পুলের গলিতে প্রকাশ্য রাস্তায় খুন হয়েছিলেন বহরমপুর গার্লস কলেজের ছাত্রী সুতপা চৌধুরী। সেই ঘটনার পর বহরমপুর শহরের মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। তারপর বহরমপুরে অনেকে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছিলেন। বহরমপুরের বিভিন্ন ক্যারাটে সংস্থায় অনেকে ভর্তিও হয়েছিলেন। আর জি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে ফের ক্যারাটে প্রশিক্ষণে আগ্রহ বেড়েছে মহিলাদের।
জেলার কয়েকটি স্কুল আগেই উদ্যোগী হয়ে পড়ুয়াদের জন্য ক্যারাটে প্রশিক্ষণ শুরু করেছিল। কোথাও তা চালু আছে, কোথাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফের সেগুলি চালু হবে। লালগোলার লস্করপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এক সময় ক্যারাটে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল। মাঝে কয়েক মাস নানা কারণে তা বন্ধ ছিল। কিন্তু আর জি করের ঘটনা সামনে আসতেই শনিবার থেকে সেখানে ছাত্রীদের ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রায় ৩০০ জন ছাত্রী ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছে। সপ্তাহে একদিন করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরে সপ্তাহে তা দু’দিন করে দেওয়া হবে। বহরমপুরের বাসিন্দা মনিদীপা দাস ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘সরকারকে নারী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে মহিলাদেরও আত্মরক্ষার পাঠ নেওয়া উচিত। কখনও বিপদে পড়লে নিজেকে যাতে তিনি রক্ষা করতে পারেন। এই জন্য ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকলে ভাল হয়। আমার মেয়েকেও ক্যারাটে প্রশিক্ষণ সংস্থায় ভর্তি করিয়েছি।’’