‘এমন আন্দোলন নিছক শো-কজ়ে থামানো যাবে না’, ছাত্রীদের কৃতিত্ব দিয়ে বলছেন হাওড়ার সেই ‘বড়দি’
আনন্দবাজার | ২৬ আগস্ট ২০২৪
স্কুলের মাঠে দাঁড়িয়ে ছাত্রীদের উদ্দেশে তাঁর মিনিট পাঁচেকের বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। ওই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে হাওড়ার তারাসুন্দরী বালিকা বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষিকা মোনালিসা মাইতি শান্ত স্বরে ছাত্রীদের বলছেন, ‘‘তোমাদের বলতে এসেছি, নিজেদের অধিকারের জন্য যে কোনও ভিক্টিমের (নির্যাতনের শিকার) পাশে দাঁড়াও! না-হলে তুমি তোমার অধিকার কোনও দিনও খুঁজে পাবে না।’’
রবিবার মোনালিসা জানান, গত মঙ্গলবার, ২০ অগস্ট নবম থেকে দ্বাদশের পড়ুয়াদের নিয়ে তিনি মৌনী মিছিল করেছিলেন। এর জন্য এখনও তাঁকে শো-কজ় বা কারণ দর্শানোর চিঠি ধরানো হয়নি বলেই জানান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকে আশঙ্কা করলেও আমায় এখনও কোনও শো-কজ় চিঠি ধরানো হয়নি। পেলে আমি নিজের মতো করেই উত্তর দেব। এমন গণআন্দোলন নিছকই শো-কজ় করে, বদলি করে থামানো যাবে না।’’
তবে এই আন্দোলনের পথে ছাত্রীরাই তাঁকে টেনে এনেছে বলে জানাচ্ছেন মোনালিসা। নবম থেকে দ্বাদশের ৪৫০ জন ছাত্রী লিখিত আবেদন করে বলে, তারা আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদ করতে চাইছে। প্রধান শিক্ষিকা ব্যাঁটরা থানায় মৌনী মিছিলের আবেদন জানান। ব্যাঁটরা থানা লিখিত ভাবে আবেদন মঞ্জুর করেনি। মোনালিসা বলেন, ‘‘পড়ুয়ারা মিছিল করার জন্য এতটাই মরিয়া ছিল যে, বলে, আমি না-বেরোলেও ওরা বেরোবে। কিন্তু আমি তো ওদের বড়দি। আমায় থাকতেই হবে ওদের সঙ্গে। আমি তাই ছাত্রীদের
পাশে ছিলাম।’’
কিন্তু স্কুল চলাকালীন বেরিয়ে মিটিং-মিছিলে ছাত্রছাত্রীরা কোনও দুর্ঘটনায় পড়লে তার দায় কে নেবে? এমনই যুক্তি দিয়েছেন স্কুল শিক্ষা দফতরের কোনও কর্তা। তাতে বিচলিত নন মোনালিসা। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের বাইরেও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নানা কর্মসূচি তো হয়েই থাকে। তখনও তো আমরাই দায়িত্ব নিয়ে ওদের সঙ্গে করে সেখানে যাই।’’
বরং আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পথে নামার দৃষ্টান্তই তুলে ধরছেন এই প্রধান শিক্ষিকা। বলছেন, ‘‘এই ঘটনার প্রতিবাদে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীও রাস্তায় হেঁটেছেন। সবাই একটা খারাপ কাজের বিরুদ্ধে রয়েছে। সুস্থ সমাজ সেই কাজ মানতে পারে না। আমার তো মনে হয়, কেউ এই প্রতিবাদের বিরুদ্ধে নেই।‘‘
মোনালিসার আশা, আর জি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতার পাশে দাঁড়াতে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের ঢেউ বিচার না-মেলা পর্যন্ত শান্ত হবে না। তিনি বলেন, ‘‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে একটা গণআন্দোলন শুরু হয়েছে। বিচার হওয়া পর্যন্ত এটা চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।’’
ছাত্রীদের নিয়ে এখনই ফের পথে নামার পরিকল্পনা নেই বলেই অবশ্য জানাচ্ছেন মোনালিসা। তবে আজ, সোমবার কলেজ স্কোয়ারে বিদ্যাসাগরের মূর্তির নীচে প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতিবাদে যাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।