কোনও সাধারণ মানুষ নন, ক্রেডিট কার্ড নিতে গিয়ে জামতাড়া গ্যাংয়ের হাতে প্রতারাণার শিকার হন এক বিচারকও। টেলি ভেরিফিকেশন করাতে গিয়ে তাঁকে খোয়াতে হয়েছিল ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। আর তাতে ব্যাঙ্ক কর্মীদের একাংশেরও জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। পুলিশে অভিযোগের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের আবেদন জানিয়ে মামলা হয়েছিল বীরভূম জেলা ক্রেতাসুরক্ষা আদালতে।সেই আদালত একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক ব্রাঞ্চ ম্যানেজার-সহ তিন কর্মী এবং ব্যাঙ্কটির দু’টি শাখাকে চার লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি অভিযোগকারীকে ফেরাতে হবে ১.২৫ লক্ষ টাকাও। বীরভূম ক্রেতাসুরক্ষা আদালতের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুদীপ মজুমদার এবং সদস্য শাশ্বতী সাহা নির্দেশে বলেছেন, ক্ষতিপূরণ হিসেবে মামলাকারীকে ২ লক্ষ টাকা দিতে হবে অভিযুক্তদের।
আরও ২ লক্ষ টাকা দিতে হবে ভবিষ্যতে যাতে কোনও গ্রাহকের সঙ্গে তারা এমন ঘটনা না ঘটান, তার জন্য। এ ছাড়াও মামলার খরচ হিসেবে আরও ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৪৫ দিনের মধ্যে সেই টাকা দেওয়া না-হলে বার্ষিক ৯ শতাংশ হারে সুদ গুণতে হবে।
ঘটনাটি ২০২০ সালের। রামপুরহাট মহকুমা আদালতের বিচারবিভাগীয় বিচারক অমিত চক্রবর্তীর সেখানকারই একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট ছিল। সেই ব্যাঙ্কের এক কর্মী অমিতকে একটি ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি জানান, ফর্ম পূরণ করার ১৫ দিনের মধ্যে কার্ড পেয়ে যাবেন তিনি। কিন্তু দু’মাস পরেও কার্ড না-পাওয়ায় ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিচারক।
ব্যাঙ্কের কর্মী জানান, ওই ব্যাঙ্কের কলকাতার ডালহৌসি শাখার ক্রেডিট কার্ড বিভাগের কর্মী রোহন দত্ত তাঁকে ফোন করে কার্ডের ব্যবস্থা করবেন। অমিতকে রোহন দত্ত ফোন করে জানান, পরদিন দুপুরে তাঁর ভার্চুয়াল ভেরিফিকেশন হবে। সেইমতো ফোন আসে। ওই ব্যাঙ্কের কর্মী পরিচয় দিয়ে বিচারকের কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাঙ্কের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন খুলে বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়া হয়।
সন্দেহ হওয়ায় অমিত ফোন কেটে রোহনকে ফোন করেন। রোহন আশ্বস্ত করেন, ব্যাঙ্কের কর্মীরাই ফোন করেছেন। তাই নির্ভাবনায় তথ্য শেয়ার করা যায়। ফের ফোন এলে রোহনের কথামতো সব তথ্য দিয়ে দেন বিচারক। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে চার দফায় ১.২৫ লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে যায়। তার পরে তিনি রোহনকে তো বটেই, ব্যাঙ্কের দু’টি শাখাতেই যোগাযোগ করেন।
কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তিনি সিউড়ি সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ করেন। তদন্তে দেখা যায়, ওই ঘটনায় জামতাড়া গ্যাং জড়িত। অমিতের টাকা কোন অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছে, তা জানার পরেও কোনও পদক্ষেপ করেনি ব্যাঙ্ক। ক্রেতাসুরক্ষা আদালতে হলফনামায় রোহন জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে বিচারক অমিত চক্রবর্তীর কোনও কথা হয়নি। ফলে, তিনি দায়ী নন। ব্যাঙ্কও তা-ই দাবি করেছিল।
রায় দিতে গিয়ে ক্রেতাসুরক্ষা আদালত জানায়, সাইবার ক্রাইম পুলিশের দেওয়া রিপোর্টে প্রমাণিত, রোহনের সঙ্গে অমিতের একাধিকবার কথা হয়েছিল। ব্যাঙ্ক দাবি করেছিল, অমিত পুরো টাকাই ফেরত পেয়েছেন, তিনি তা চেপে গিয়েছেন। তদন্তে দেখা গিয়েছে, পুলিশ টাকা উদ্ধার করলেও তা ফৌজদারি আদালতের হেফাজতে রয়েছে।
মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত সেই টাকার কোনও গতি হবে না। আদালতের প্রশ্ন, ক্রেডিট কার্ডের জন্য ক্রেতা আবেদন করেছেন— সেই তথ্য জামতাড়া গ্যাংয়ের কাছে গেল কী ভাবে? কোন অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার হয়েছে, সেটা জানার পরেও ব্যাঙ্ক কেন টাকা ফেরানোর ব্যবস্থা করল না?