আরজি করের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের কাছে দাবি করেছেন, ১৫ দিনের মধ্যে ধর্ষণের মামলায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করতে আইন সংস্কার করতে হবে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ধরনের নৃশংস ঘটনায় দ্রুত তদন্ত ও বিচার শেষের জন্য দাবি তুলেছেন।এই আবহে অন্য একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট ধর্ষণ-সহ যাবতীয় গুরুতর মামলায় দ্রুত বিচার শেষ করতে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (এসওপি) তৈরির নির্দেশ দিল রাজ্যেকে। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্তের ডিভিশন বেঞ্চ গত সপ্তাহে একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে এই নির্দেশ দিয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে রাজ্যকে রিপোর্ট দিতে বলেছে আদালত।
আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, শুধু এসওপি তৈরি করলেই হবে না, তদন্তের জন্য টাইমলাইন বেঁধে দিতে হবে। তাতে ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে পাওয়া থেকে দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার জন্যও সময় বেঁধে দিতে হবে। একইসঙ্গে এই সব কাজের ক্ষেত্রে দেরি হলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের যাতে দায়বদ্ধ করা যায়, সেই নির্দেশও দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
আদালত বলেছে, এক্ষেত্রে যদি সময় মেনে কাজ না হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপেরও ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ নিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর রাজ্যকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তদন্তের দ্রুত অগ্রগতির জন্য ফরেন্সিক ও ডিএনএ পরীক্ষার চাপ সামাল দিতে আইআইটি খড়্গপুর বা শিবপুর আইআইইএসটি-র পরিকাঠামো এবং গবেষকদের অভিজ্ঞতাকেও কাজে লাগাতে চায় হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে মাদক মামলায় মাদকের নমুনা পরীক্ষায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে আগ্রহী আদালত। এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থানও জানতে চেয়েছে বেঞ্চ। কেন্দ্রের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার ও রাজ্যের কৌঁসুলি রুদ্রদীপ্ত নন্দীকে কোর্ট বলেছে, এই ব্যাপারে তাঁরা যেন সংশ্লিষ্ট সরকারকে তাদের অবস্থান দ্রুত জানানোর কথা জানিয়ে দেন।
এর আগে এই আদালতই কল্যাণীতে প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র জেনোমিক্স গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জেনোমিক্সকে ফরেন্সিকের তকমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ মেনে এখনও পর্যন্ত সেখানকার ১৬ জন ডক্টরেট এবং অধ্যাপককে ফরেন্সিক পরীক্ষকের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানিয়েছে ওই প্রতিষ্ঠান।
দেশে নতুন যে ফৌজদারি আইন এসেছে, তাতে বহু ক্ষেত্রে ফরেন্সিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়ায় বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থাকার অভিযোগ রয়েছে। রয়েছে মাদক পরীক্ষার রিপোর্ট সময়ে না আসার অভিযোগও। ফলে বিনা বিচারে বছরের পর বছর অভিযুক্তদের আটকে থাকতে হচ্ছে জেলে।
এই অবস্থায় বিচারপতি বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ কল্যাণীতে অবস্থিত আর একটি কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ বা আইআইএসইআর-কেও এ বার ফরেন্সিক পরীক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেন্দ্র যাতে স্বীকৃতি দেয়— তা নিশ্চিত করতে চাইছে।
আদালতের বক্তব্য, একইসঙ্গে আইআইটি খড়্গপুরের মতো আর কোন কেন্দ্রীয় শিক্ষা এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই রাজ্যে আছে, যাদের ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা যায়— চার সপ্তাহের মধ্যে এই নিয়ে কেন্দ্রকে রিপোর্ট দিতে হবে হাইকোর্টে। রাজ্য সরকারকেও তার ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পরিকাঠামো ও অভিজ্ঞ লোক বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।