অভিরূপ দাস: মাটি দেবেন সোনাগাছির পতিতাপল্লির যৌনকর্মীরা। দুর্গোপুজোয় (Durga Puja 2024) তিলোত্তমায় বিশৃঙ্খলতা তৈরি হতে দেবেন না তাঁরা। “দুর্গাপুজোয় লাগে যৌনপল্লির মাটি। আর জি কর কাণ্ডের জেরে তা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গণিকারা!” বিগত কয়েকদিন ধরে এমন পোস্ট ঘুরছে সোশাল মিডিয়ায়। যাকে সম্পূর্ণ ভুয়ো বললেন সোনাগাছির যৌনকর্মীরা। বরং তাঁদের পালটা দাবি, “আমরা কখনও দুর্গাপুজোয় জটিলতা তৈরি করতে চাইনি। চাইও না। পুজো কেন বন্ধ হবে? আমাদের নাম নিয়ে এসব মিথ্যে রটানো হচ্ছে।”
সম্প্রতি আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় চারিদিকে শোকের আবহ। অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হচ্ছেন সমাজের নানা ক্ষেত্রের মানুষ। প্রতিবাদ মিছিল করেছেন সোনাগাছির যৌনকর্মীরাও। তারপরেই সামাজিক মাধ্যমে রটে যায় একটি ‘পোস্ট।’ যেখানে লেখা, “যৌনকর্মীরা বলছে যৌনপল্লির মাটি তারা দেবে না।” এদিকে যেকোনও দুর্গাপুজো করতে আবশ্যিক উপকরণ পতিতাপল্লির দরজার সামনের মাটি। যদিও তা নিয়ে জনমানসে ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই ভাবেন যৌনপল্লির মাটি দিয়ে ঠাকুর গড়া হয়। শাস্ত্রজ্ঞ জয়ন্ত কুশারী জানিয়েছেন, “প্রতিমা তৈরি করতে যৌনপল্লির মাটি আদৌ লাগে না। যাঁরা এমনটা জানেন তাঁরা ভুল জানেন।”
তবে, কোথায় লাগে যৌনপল্লির মাটি? সর্বভারতীয় প্রাচ্য বিদ্যা আকাদেমির অধ্যক্ষর কথায়, শাস্ত্র বলছে দুর্গাপুজোর সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে মায়ের মহাস্নান হয়। সেখানে দশ রকমের মাটি লাগে। তার মধ্যে একটা অবশ্যম্ভাবী উপকরণ যৌনপল্লির দরজার সামনের মৃত্তিকা। শাস্ত্রজ্ঞ জানিয়েছেন, সে মৃত্তিকা না দেওয়া মানে কার্যত পুজো বন্ধ রাখার শামিল। সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে পুরো বিষয়টি রটছে, তাতে এমন বার্তাও যাচ্ছে যে দুর্গাপুজোয় ব্যাঘাত তৈরি করতে চান পতিতাপল্লির মহিলারা।
সোনাগাছির দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির অ্যাডভোকেসি অফিসার সুজাতা সাহা জানিয়েছেন, পতিতাপল্লির একজনও দুর্গাপুজোয় ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে চায় না। আমরা চাই আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় অভিযুক্ত যথোপযুক্ত শাস্তি পাক। সুজাতাদেবীর কথায়, “পুজোটা সকলের আনন্দের জায়গা। সারাবছর অসংখ্য মানুষ এটার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। পুজোকে ঘিরে লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হয়। সেখানে কেন পুজোয় ব্যাঘাত তৈরি করব? সোনাগাছির পতিতাপল্লির কর্মীরা বলছেন, বিদেশ থেকে শহর কলকাতায় অসংখ্য বিদেশি আসেন পুজো দেখতে। তাঁদের কাছে আমরা শহর নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি করতে চাই না।”