আর জি করের অপরাধস্থলে বহু মানুষের জমায়েত, নষ্ট হয়েছে প্রমাণ? কী বলছে লালবাজার?
প্রতিদিন | ২৭ আগস্ট ২০২৪
অর্ণব আইচ: আর জি কর হাসপাতালের অপরাধস্থল সেমিনার হলে কি সত্যিই আনাগোনা করেছিল প্রচুর মানুষ? যার ফলে নষ্ট হয়েছে তথ্য প্রমাণ? একটি ৪৩ সেকেন্ডের ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরই এই সমস্ত প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। সোমবার বিকেলে লালবাজারে সাংবাদিক সম্মেলন করে সমস্ত প্রশ্নের জবাব দিলেন কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। তিনি সাফ জানিয়েছে, ৫১ ফুট লম্বা সেমিনার হলের ৪০ ফুট আগেই কর্ডন করে রাখা হয়েছিল। বাকি ১১ ফুটে পুলিশ, চিকিৎসক, মৃতার পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। ঘিরে ফেলা এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
পুলিশ আধিকারিকের কথায়, “আর জি করের থার্ড ফ্লোরের সেমিনার হল হচ্ছে প্লেস অফ অকারেন্স। এটি ৫১ ফুট আর ৩২ ফুট। এটার একটা অংশে মৃতদেহ ছিল। ঘরের ৪০ ফুট পর্যন্ত পুলিশের কর্ডন করা ছিল। যেখানে দেহ পাওয়া গিয়েছিল। সেখান থেকে ৪০ ফুট কর্ডন করে রেখেছিল পুলিশ। প্রথমে মৃতদেহ দেখার পর হাসপাতালের সাদা পর্দা দিয়ে ওই এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছিল।” তাহলে জমায়েত কথা হল? জবাবে ইন্দিরা মুখোপাধ্য়ায় বলেন, “জমায়েতের যে ফুটেজ আপনারা দেখছেন সেটা ৪০ ফুটের বাইরের বাকি ১১ ফুটে জমায়েতের। এই জায়গায় অনেকে উপস্থিত ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। হাসপাতালের স্টাফ ছিল। পুলিশের স্টাফ ছিল। অনেক ডাক্তারবাবুরা ছিলেন। মৃত ঘোষণা করার জন্য ইএমওকে প্রয়োজন হয়। তিনি জরুরি বিভাগে বসেন। তিনিও ১১ ফুট জায়গায় বসেছিলেন। অনেক ডাক্তারবাবু যারা ওখানে পিজিটি পড়ুয়া, তাদের অনেক দাবিদাওয়া ছিল, তারাও ওখানে বসেছিলেন। ওরা ওদের দাবিদাওয়া লেখালিখি করেছিল। সেটাও ওই ১১ ফুট জায়গার মধ্যে বসে।”
ওই জমায়েতে বহিরাগতরাও ছিলেন, এমন খবর ছড়িয়েছে সোশাল মিডিয়ায়। সেই দাবি নস্যাৎ করে ডিসি সেন্ট্রাল বলেন, “বহিরাগত কেউ ছিল না। পুলিশ, হাসপাতালের স্টাফ ও ডাক্তারবাবুরা ছিল। কর্ডন করা ৪০ ফুটে কোনও বহিরাগত প্রবেশ হওয়া সম্ভব না। পুলিশের পুরো ফোর্স, আমাদের যারা ছিল তারা লাইন করে দাঁড়িয়েছিল। খুব রেস্ট্রিকটেড কয়েকজন প্রবেশ করতে পেরেছিল। তাঁদের মধ্যে তদন্তকারী অফিসাররা, ফরেনসিকের সদস্যরা, বডি শিফটিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা, মা-বাবা, ভিডিওগ্রাফি ফটোগ্রাফি যারা করছিলেন তাঁরা ওখানে ছিলেন। এছাড়া আর কারও ওই কর্ডনের মধ্যে প্রবেশ হয়নি।” ওখানে কোনও আইনজীবী ছিলেন? পুলিশ আধিকারিকের দাবি, হাসপাতালের তরফে আইনজীবী রাখা হয়েছিল। তবে আইনজীবী কেন রাখা হয়েছিল তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে বলে জানালেন তিনি। উল্লেখ্য, সেমিনার হলে ৫টি দরজা রয়েছে। কিন্তু একটি মাত্র দরজা দিয়েই সকলে ঢোকা বেরনো করেছিল দাবি ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের। কারণ বাকি দরজাগুলি বন্ধ করা ছিল দাবি করেছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ৮ আগস্ট রাতে আর জি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। ৯ আগস্ট সকালে সেমিনার হলে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। নিয়ম বলছে, সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধস্থল সিল করার কথা। কিন্তু সেই কাজ করা হয় রাত ১১টা নাগাদ। এর মধ্যেই সেই সেমিনার হলে প্রচুর লোক যাতায়াত করেন। পুলিশের সামনেই পুরো বিষয়টি ঘটে। তারা কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।