নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: বন্ধ হয়েছে ২০০৮ সালে। তারপর থেকে একযুগের বেশি সময় পার হলেও আজও চালু হল না পুরুলিয়ার একমাত্র হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। বর্তমানে মেডিক্যাল কলেজের চারপাশ ঢেকেছে ঘন জঙ্গলে। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজটি বর্তমানে মদ্যপ, জুয়াড়িদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। জেলার বাসিন্দাদের আর্জি, অবিলম্বে হাসপাতালটি চালুর ব্যবস্থা করুক সরকার।
জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬৯ সালে পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে দুলমি এলাকায় হোমিওপ্যাথি হাসপাতালটি চালু হয়। ১৯৮০ সালে হাসপাতালের পাশাপাশি চালু হয় মেডিক্যাল কলেজও। শুরুতে ডিপ্লোমাকোর্স করানো হলেও ১৯৯৮ সাল থেকে ‘ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি’ কোর্স চালু হয়। জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মাধ্যমে ভর্তি শুরু হয়। ২০০৩ সাল থেকে কলেজে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকে।
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মণীন্দ্রনাথ জানা বলেন, জয়েন্টের মাধ্যমে প্রতি বছর মোট ৫০জন পড়ুয়া ভর্তি হওয়ার কথা থাকলেও ২০০৩ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চার বছরে মাত্র ৩৮জন পড়ুয়াকে পাঠানো হয়। ২০০৮ সালে কলেজে পড়াশোনার উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই এই যুক্তি দেখিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ ‘আয়ুষ’ এই কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দেয়। কলেজ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইন্ডোর পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতনও।
যদিও তারপর থেকে পুনরায় কলেজটিকে চালু করতে লড়াই শুরু করেন মণীন্দ্রনাথবাবুরা। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে শুরু করে এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি পাঠানো হয় কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে। ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর পুরুলিয়ার হুটমুড়ায় প্রকাশ্য প্রশাসনিক সভা থেকে এই কলেজটিকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে বলে ঘোষণাও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আশার আলো দেখতে শুরু করেছিলেন জেলার বাসিন্দারা। কিন্তু, সেই ঘোষণারও এক দশক পেরিয়েছে। আজও চালু হয়নি জেলার একমাত্র হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। এই সময়কালের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কত হাজার চিঠিপত্র যে আদানপ্রদান হয়েছে, কত সরকারি আধিকারিক যে পরিদর্শন করে রাজ্য ও কেন্দ্রে রিপোর্ট জমা করেছেন, তার হিসেব নেই। তবুও চালু হল না পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
এক সময় যে মেডিক্যাল কলেজ পড়ুয়াদের কোলাহলে গমগম করত, আজ তা যেন প্রাণ হারিয়েছে। প্রায় ৯ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এই কলেজ ও হাসপাতাল বর্তমানে ঝোপঝাড়ে ঢেকেছে। ভবনগুলির অবস্থাও শোচনীয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চুরি যাচ্ছে বহুমূল্যবান যন্ত্রপাতি। হাসপাতাল এখন সমাজবিরোধীদের আড্ডাস্থল। তবুও নিজের চেষ্টাতেই হাসপাতালের একটি ঘরে আউটডোর পরিষেবাটুকু চালু রেখেছেন কলেজের অধ্যক্ষ মণীন্দ্রনাথ জানা। সরকারিভাবে কোনও সাহায্য মেলে না। নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করেই তিনি রোগী পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। মণীন্দ্রনাথবাবু বলেন, কলেজ চালুর ব্যাপারে কারও কাছে আর্জি জানাতে বাদ রাখিনি! কিন্তু, কারওরই কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই।
এনিয়ে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, রাজ্যে এনিয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। সবুজ সংকেত এলেই উদ্যোগ নেওয়া হবে। একযুগ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আর কবে সেই সংকেত আসবে, এই প্রশ্নই তুলছে জেলাবাসী। -নিজস্ব চিত্র