• ‘বডি না পড়লে জোর পাবে না আন্দোলন’
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, ঘাটাল: ‘বডি না পড়লে আন্দোলন জোরদার হবে না।’ ঘাটাল মহকুমায় কয়েকজন বিজেপি নেতার ওই ধরনের ভিডিও ক্লিপ ভাইরালকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক শোরগোলের সৃষ্টি হয়েছে (‘বর্তমান’ সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি)। সেই ভিডিওতে কখনও খড়ার পুরসভার বিজেপি নেতা এবং কাউন্সিলারকে দেখা যাচ্ছে। কখনও বা  চন্দ্রকোণা-২ ব্লকের বিজেপি নেতাকে দেখা যাচ্ছে। প্রত্যেকের মুখে একই কথা, ‘আন্দোলনে রাবার গুলি না চললে, বডি না পড়লে আন্দোলন গতি পায় না।’ ওই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই ঘাটাল থানার পুলিস খড়ারের দুই বিজেপি নেতাকে আটক করেছে।

    সোমবার দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিস সুপার ধৃতিমান সরকার ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমরাও ভিডিওগুলো পেয়েছি। শনাক্ত করেছি ভিডিওর মধ্যে কারা আছেন। দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডেকেছি। আমি নিজেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এর মধ্যে অন্য কোনও অ্যাঙ্গেল, সম্ভাবনা বা চক্রান্ত আছে কি না, তা  তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পরে বিস্তারিত জানাব।’  

    ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট ভিডিওগুলিকে ‘ফেক’ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘যান্ত্রিক কারসাজি করে আমাদের দলের নেতাদের মুখে এসব কথা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। তাছাড়া ২৭ তারিখের নবান্ন অভিযানের সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। আমরা ওই ভিডিও’র বিরুদ্ধে আদালতে যাব।’

    তিনটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। তিনটি ভিডিও ক্লিপে যাঁদের কথা শোনা যাচ্ছে, তাদের ছবি দেখে পুলিস জানিয়েছে, ওই তিনজন হলেন খড়ার পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির কাউন্সিলার বাবলু গঙ্গোপাধ্যায়, বিজেপির রাজ্য সমবায় সমিতির সহকারী আহ্বায়ক সৌমেন চট্টোপাধ্যায় এবং চন্দ্রকোণা-২ ব্লকের মণ্ডল কমিটির নেতা বিপ্লব মাল। কিন্তু পাশাপাশি তিনজনকে একটি জায়গায় বসে ভিডিওগুলি রেকর্ডিং করা হয়নি। প্রত্যেকটি ভিডিও’র ব্যাকগ্রাউন্ড আলাদা। তবে খড়ারের বিজেপির কাউন্সিলার যখন কথা বলছিলেন তাঁর পাশে সৌমেনবাবুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। সৌমেনবাবুর একটি আলাদা ভিডিও ক্লিপিংও রয়েছে। তিন নেতাকেই একই সুরে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। তাঁরা বলেছেন, ‘২৭ তারিখের আন্দোলন কি আদৌ শান্তিপূর্ণ হবে? ওখান থেকে নতুন করে আন্দোলন পিকআপ নেবে। গুলি চলবে। ওখানে রাবার বুলেট চলবেই। যাঁরা নবান্ন অভিযানে যাবেন, তাঁরা চালাতে বাধ্য করাবেন। এর মধ্যে একটা রাজনৈতিক চক্র চলছে। এখান থেকেই মোড় ঘুরে যাবে। দু’একটা বডি না পড়লে রাজনীতির মোড় কখনওই ঘুরবে না।’ 

    চন্দ্রকোণার বিপ্লব মালকে পুলিস আটক করেনি। খড়ার শহরে ওই দুই নেতাকে পুলিস এদিন আটক করে থানায় তুলে নিয়ে আসে। এসপি বলেন, ‘চন্দ্রকোণার ব্যক্তিটিকে আটক করার জন্য পুলিস পাঠানো হয়েছে। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সহ­সভাপতি তথা ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি বিকাশ কর ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘বিজেপি মানেই গুন্ডামি দাঙ্গা, হাঙ্গামা, ধর্ম নিয়ে ষড়যন্ত্র করে প্রতিহিংসা করার চেষ্টা। আমরা চাই পুলিস প্রকৃত তদন্ত করে এই সব উস্কানিমূলক বার্তা ছড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।’ শীতলবাবুর পাল্টা উত্তর, ‘আমরাও চাই পুলিস তদন্ত করুক। সেই সঙ্গে আমরা দাবি রাখব যে ভিডিওটি বানিয়েছিল, তাকেও প্রকাশ্যে আনা হোক।’
  • Link to this news (বর্তমান)