• জগদীশচন্দ্রের আবিষ্কার ভুলেছে বাঙালি ব্যানার লাগাতে একটা গাছে ৬০টি পেরেক!
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: ক্রেসকোগ্রাফ যেন কথা বলেছিল বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসুর সামনে। দেখিয়ে দিয়েছিল গাছেরও প্রাণ আছে। রক্তমাংসের না হওয়া সত্ত্বেও আলো, শব্দ, স্পর্শ এবং তাপের মতো উদ্দীপনায় নিজের প্রতিক্রিয়া জানান দেয় গাছ। একেবারে প্রাথমিকস্তরে শেখা এই বিজ্ঞান পড়েও আজ অসচেতন মানুষ। সোমবার শান্তিপুরে ‘পেরেক সরাও, গাছ সারাও’ অভিযানে নেমে কার্যত ভিড়মি খেলেন পরিবেশপ্রেমীরা। কেবল একটিমাত্র গাছ থেকে তাঁরা উদ্ধার করেছেন, ৬০টিরও বেশি পেরেক! যা দেখে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক কর্মীর গলায় আক্ষেপের সুর, জগদীশচন্দ্রকে ভুলেছে বাঙালি। নেহাত গাছ আজ বিচার চাইতে জানে না তাই...

    ‘গাছের প্রাণ আছে’, এই তত্ত্ব প্রমাণের শতবর্ষ পরেও ‘চেতনা’ ফেরেনি মানুষের। তাই বৃক্ষচ্ছেদন যেমন আছে, তেমনই সামান্য পোস্টার-হোর্ডিং লাগানোর জন্য সেই ‘প্রাণ’যুক্ত গাছে নাগাড়ে পেরেক পুঁতে যাওয়ার অপকর্মে নিজেদের নির্মমতার উদাহরণ দেয়। রাস্তার ধারে বা জনবহুল বাজারে গাছগুলি ক্রমশ হয়ে উঠছে বিজ্ঞাপন লাগানোর খোলা জমি। শান্তিপুরেরও বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার এদিক ওদিক চোখ ঘোরালে দেখা যায়, গাছ ভর্তি পেরেক ঠুকে লাগানো বিভিন্ন দোকান, সংস্থা অথবা শোরুমের পোস্টার। প্রশাসন বিভিন্নভাবে গাছে পেরেক পোঁতার প্রবণতা থেকে বিরত থাকার আর্জি জানালেও কিছু মানুষ তাতে নিয়মিত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে। গাছে লাগানো এই পেরেক সরাতেই সোমবার শান্তিপুরের গোবিন্দপুর গলায়দড়ি বটতলা থেকে গোবিন্দপুর বাজার পর্যন্ত অভিযান চালায় ‘পরিবেশ ভাবনা মঞ্চ’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি। রাস্তার ধারে একের পর এক গাছ থেকে তারা পেরেক সহ হোর্ডিং সরাতে শুরু করে। একটি বটগাছের পেরেক তুলতে গিয়ে কার্যত চোখ কপালে ওঠে সংস্থার কর্মীদের। সংস্থার এক সদস্যের কথায়, প্রাচীন গাছটি যেন যুগ যুগ ধরে তার উপর চলা নির্মমতার উদাহরণ দেখাতে চাইছিল আমাদের। ওই গাছ থেকে সব মিলিয়ে ৬০টিরও বেশি পোঁতা পেরেক উদ্ধার হয়েছে। আমরা এতদিন ধরে কাজ করছি, কিন্তু একটা কাছ থেকে এত বেশি পেরেক উদ্ধার হতে পারে, এটা আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। 

    এলাকায় যত ধরনের ব্যানার রয়েছে তার সমস্ত একটি করে লাগানো হতো এই গাছেও। স্রেফ সচেতনতার অভাবে একটা প্রাচীন গাছকে নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ছোট ছোট শাখা-প্রশাখা নষ্ট হয়ে গিয়েছে পেরেকের কারণে। 

    স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি গাছ থেকে পেরেক খোলার পাশাপাশি এই সমস্যার পাকাপাকি সমাধান করতে উদ্যোগ নেয়। সাধারণত যাদের হোর্ডিং অথবা ব্যানার গাছগুলিতে লাগানো ছিল, তাদের ফোন করেও ‘সাবধান’ করা হয়। ভবিষ্যতে গাছের উপর এভাবে নির্মমতার উদাহরণ দিলে সরাসরি আইনানুগ মামলা করা হবে বলেও তারা জানায়। সংস্থাটির দাবি, খুব ছোট্ট এলাকাজুড়ে এদিন কাজ করেছি। ভবিষ্যতে শান্তিপুরের বাইরেও অন্যান্য জায়গায় আমাদের এই  ‘পেরেক সরাও, গাছ সারাও’ অভিযান চলবে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)