• আন্দোলন চলছে! ফিরলেন শ্বাসকষ্টে ভোগা আশির বৃদ্ধ
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৪
  • সঞ্জিত সেনগুপ্ত, শিলিগুড়ি: ৮০ বছরের বাবার তীব্র শ্বাসকষ্ট। গাড়ি থেকে নামার ক্ষমতা নেই। কোনওক্রমে গাড়ি থেকে বাবাকে পিঠে চাপিয়ে তাজু রাই ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ বাদে দেখা যায় একইভাবে বাবাকে গাড়িতে বসিয়ে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে বাবার পাশে গাড়িতে বসলেন। 

    সমস্যার কথা জানতে চাইলে তাজু বলেন, বাবার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। রবিবার রাতে অপেক্ষা করেছি কতক্ষণে সকাল হবে। ভোর হতেই গাড়ি ভাড়া করে বাবাকে জয়গাঁ থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলাম। ভর্তির জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। ভর্তি করে অক্সিজেন দেওয়া দরকার, কিন্তু জরুরি বিভাগ থেকে ডাক্তাররা বলেন, তাঁদের আন্দোলন চলছে। ডাক্তারের অভাব রয়েছে। ভর্তি নেওয়া যাবে না। বাবার কষ্টের কথা বার কয়েক বলার পর ডাক্তাররা বলেন, বাড়ি নিয়ে গিয়ে নেবুলাইজ করলে শ্বাসকষ্ট কমে যাবে। জানি না বাবার ভাগ্যে কী রয়েছে। এরকম একজন রোগী ফিরিয়ে আন্দোলন! 

    আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী হয়রানি অব্যাহত। এটা তারই একটি খণ্ডচিত্র। আউটডোর খোলা থাকলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা মিলছে না। জরুরি বিভাগ থেকেও সঙ্কটজনক রোগীকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সোমবার জয়গাঁর বাসিন্দা তাজু রাইয়ের কথায় তা আরও একবার স্পষ্ট হল। 

    মেডিক্যালে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন চললেও জরুরি বিভাগ খোলা রয়েছে। সেখানে ঠিকমতো চিকিৎসা পরিষেবা মিলছে। প্রয়োজন মতো রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। এতদিন  হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই সাফাই গেয়ে এসেছে। কিন্তু, প্রথম থেকেই অভিযোগ ছিল খুব জটিল অবস্থা না হলে রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। তাজু রাইয়ের অভিজ্ঞতা সেই অভিযোগকে জোরালো করল। 

    হতাশার সঙ্গে জয়গাঁর ওই বাসিন্দা বলেন, জানি না এভাবে কতদিন মানুষ বিনা চিকিৎসায় থাকবে। হাসপাতালে এসে ঘুরে যেতে হবে সঙ্কটজনক রোগীদের। 

    এদিকে, আউটডোর খোলা থাকলেও সেখানে রোগীদের ক্ষোভ দানা বাঁধছে। এদিনও প্রতিটি আউটডোরে ছিল রোগীর লম্বা লাইন। সার্ভিস পিজিটি, সিনিয়র ডাক্তার মিলে দু’জনের বেশি চিকিৎসক নেই আউটডোরে। রোগীর তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা কম হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ রোগীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় লাইনে। 

    দিনহাটা থেকে এদিন মেডিক্যালে এসেছিলেন জগদীশ সেন। তিনি বলেন, কিডনির সমস্যা, পা ফুলে গিয়েছে। পেটেও ব্যথা। ডাক্তার দেখাতেই সকাল সকাল এসেছি।  অনেকক্ষণ আউটডোরে দাঁড়িয়ে। কতক্ষণে ডাক্তারের কাছে যাব, জানি না। একই কারণে পেডিয়াট্রিক আউটডোরে কোলের অসুস্থ শিশুদের নিয়ে নাজেহাল হন অভিভাবকরা। 

    উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক বলেন, আউটডোরে ডাক্তার কম থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। জরুরি বিভাগ থেকে রোগী ফেরানোর অভিযোগ ঠিক নয়। বাড়ির লোকেরা সবসময় মনে করেন তাঁদের রোগীকে ভর্তি করলে ভালো চিকিৎসা হবে। কিন্তু, রোগীকে ভর্তি করা জরুরি কি না সেটা চিকিৎসকরাই ভালো বোঝেন। ইচ্ছাকৃতভাবে রোগী ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। 
  • Link to this news (বর্তমান)