• ১৫ দিনে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ৬ লক্ষ 
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছিল ৯ আগস্ট। শুরুর দিকে  তাঁদের সমর্থনই করছিলেন রাজ্যের অসংখ্য‌ মানুষ। এমনকী বহু রোগীর পরিজন ভোগান্তি সত্ত্বেও খোলাখুলি জানিয়েছিলেন, এ লড়াইয়ে তাঁরা জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে। কিন্তু কর্মবিরতি যখন সপ্তাহ ঘুরল, ১০ দিন পেরল, এমনকী ২ সপ্তাহও পার করে গেল—পরিস্থিতি হয়ে উঠল অসহনীয়। হাসপাতালে হাসপাতালে চড়কিপাক খেয়েও চিকিৎসা না পাওয়া, হতদরিদ্র রোগীদের মৃত্যু, গরিব মানুষের কান্নায় ধুয়ে গিয়েছে সেই জনসমর্থন। রাজ্য, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের অনুরোধকে দূরে ঠেলে সোমবার ১৭ দিনে পড়েছে কর্মবিরতি। কত মানুষ এই সময় মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চিকিৎসা করাতে পারলেন না? সেই হিসেব কষেছিল স্বাস্থ্যভবন। আর তাতেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! কারণ, কর্মবিরতির প্রথম ১৫ দিনেই চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অন্তত ৬ লক্ষ মানুষ। এই পরিসংখ্যান ২৩ আগস্ট পর্যন্ত।

    বিষয়টি নিয়ে গত ক’দিনে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বাগুইআটির মীরা মজুমদার, বসিরহাটের রবি সরকারের মতো অসংখ্য রোগীর পরিজন। শ্যামবাজারের বাসিন্দা ডায়াবেটিসের রোগী পঞ্চানন রায়কে নিয়ে বাড়ির লোকজন গিয়েছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। তাঁরা জানালেন, ‘শুধু হাসপাতালের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে গেলাম। এদিকে সুগারের জন্য ওঁর পায়ে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছে। কী করব, কিচ্ছু বুঝতে পারছি না!’ বারাসতের বাসিন্দা নিত্যগোপাল সাহাকে নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে পরিজনরা চক্কর কাটছেন এনআরএসের। নার্ভের এই রোগীকে এখনও ভর্তি করা যায়নি।

    সাধারণ সময়ে রাজ্যের ২৪টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে প্রতি ১৫ দিনে পরিষেবা পান অন্তত ১০ লক্ষ ২ হাজার রোগী। সেখানে কর্মবিরতির প্রথম এক পক্ষকালে আউটডোর পরিষেবা নিতে পেরেছেন অর্ধেকের কম—৪ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ। অর্থাৎ, পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ৫ লক্ষ ৪০ হাজার। একইভাবে বছরের যে কোনও সাধারণ দিনে গড়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মানুষ এই সব মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তি হন। তা এখন কমে হয়েছে ৪ হাজার। ৯-২৩ আগস্ট ইনডোরে ভর্তির সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন সাড়ে ৩৭ হাজার মানুষ। এমনকী আন্দোলনের জেরে সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির ইমার্জেন্সিতেও ২৫ হাজার মানুষ কম এসেছেন। আড়াই হাজারেরও বেশি অপারেশন কম হয়েছে। রোজ গড়ে ৫৭ হাজার রোগীর ল্যাবটেস্ট বা রোগ ও রক্তপরীক্ষা হয় রাজ্যের শীর্ষস্তরের সরকারি হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজগুলিতে। সেই হিসেবে ১৫ দিনে নিখরচায় টেস্টের সুবিধা পান ৮ লক্ষ ৫৫ হাজার মানুষ। ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে তাও অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে ৪ লক্ষ ৫ হাজারে। ভাটা পড়েছে রক্ত সংগ্রহেও।

    তবে এত হাঙ্গামার মধ্যেও যে অপারেশন একেবারেই কমেনি, তা হল সন্তান প্রসব। আর সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ভেঙে পড়তে দেয়নি পরবর্তী স্তরের হাসপাতালগুলিতে প্রায় অক্ষুণ্ণ থাকা পরিষেবা। স্বাস্থ্যদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলা, মহকুমা, গ্রামীণ, স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে রোজ আউটডোরে ডাক্তার দেখান ১ লক্ষ মানুষ। আন্দোলন সত্ত্বেও এইসব হাসপাতালে ইনডোর, আউটডোরে রোগী কমেছে নামমাত্র।

    এছাড়া এক অদ্ভুত ঘটনা চোখে পড়েছে দপ্তরের। করোনাকালে খুব বড় বিপদ আপদ না হলে ভয়-আশঙ্কায় কলকাতার হাসপাতালে আসতে চাইতেন না মানুষ। এবারেও ডাক্তারদের কর্মবিরতির খবরে তেমনটা দেখা যাচ্ছে। ভোগান্তির আশঙ্কায় জ্বরজ্বালা, পেট খারাপের মতো সাধারণ অসুখে ভরসা হয়ে দাঁড়াচ্ছে স্থানীয় হাসপাতাল বা নার্সিংহোমই। 

    মানুষের এত ভোগান্তি সত্ত্বেও কর্মবিরতি চলবেই, সোমবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ডাঃ অনিকেত মাহাত। আগামী বুধবার শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করবেন তাঁরা।
  • Link to this news (বর্তমান)