• গেরুয়া বাহিনীর গোপন বৈঠক ফাঁস পুলিসের, ‘রক্তাক্ত’ নবান্ন অভিযানের ব্লু-প্রিন্ট পাঁচতারা হোটেলে 
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: তথাকথিত ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ব্যানারে আজ, মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানকে ‘রক্তক্ষয়ী’ করার বড়সড় চক্রান্তের হদিশ পেল পুলিস। অভিযানের আড়ালে গেরুয়া শিবিরের ছক যে পুলিসকে প্ররোচিত করে গুলি চালাতে বাধ্য করা—এমন ইঙ্গিতও পেয়েছে তারা। এমনকী ‘বডি না পড়লে’ আন্দোলনের ঝাঁঝ যে বাড়ানো যাবে না—ঘাটালের তিন বিজেপি নেতার কথোপকথনের এহেন ভাইরাল ভিডিও (সত্যতা যাচাই করেনি বর্তমান) সামনে এসেছে। নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করে ছাত্র সমাজের যে আহ্বায়করা সামনে এসেছেন, গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে তাঁদের সংস্রবের বিস্তর প্রমাণ মিলেছে। তাঁদেরই একজন রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ই এম বাইপাস সংলগ্ন একটি পাঁচতারা হোটেলে অতিপরিচিত এক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। পুলিসের দাবি, ওই বৈঠকেই রচিত হয়েছে অভিযানের নামে হাঙ্গামা এবং রক্ত ঝরানোর ব্লু-প্রিন্ট।  নবান্ন অভিযানের অনুমতি নেওয়া হয়নি—প্রশাসনের তরফে এই বিষয়টি জানানোর পর সোমবার দুপুরে ‘দায়সারা’ একটি মেল পুলিসকে পাঠিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাতে অনুমতি চাওয়া হয়নি। বরং কর্মসূচি হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে মাত্র। অভিযানের অনুমতি চেয়ে মেল পাঠিয়েছিল ডিএ’র দাবিতে আন্দোলন করা সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) মনোজ ভার্মা এবং এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার বলেছেন, ‘নবান্নের মতো সংরক্ষিত এলাকায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা (পূর্বতন ১৪৪ ধারা) বলবৎ রয়েছে। অনুমতিহীন এহেন কর্মসূচিকে বেআইনি ঘোষণা করা হল। সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ, এই কর্মসূচি এড়িয়ে চলুন।’ 

    রাজ্য পুলিসের দুই শীর্ষকর্তার বক্তব্য, বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর এসেছে, ওই অভিযানের আড়ালে ভিড়ে দুষ্কৃতীদের ঢুকিয়ে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চক্রান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার ইউজিসি নেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা রয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি না, ছাত্র সমাজের নাম করে পড়ুয়াদের স্বার্থ পরিপন্থী এই আন্দোলনের ডাক কেন? ‘রাবার বুলেট না চললে, বডি না পড়লে আন্দোলন গতি পাবে না’—ঘাটালের তিন বিজেপি নেতার কথোপকথনের সেই ভিডিও এদিন তৃণমূল ভবনে প্রকাশ্যে এনেছেন কুণাল ঘোষ, জয়প্রকাশ মজুমদার ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। অভিযানের আড়ালে ব্যাপক হাঙ্গামা, রক্তপাতের প্ল্যানের আসল রূপকার বিজেপি—সেই অভিযোগই করেছেন তৃণমূলের তিন নেতা। ওই ভিডিও প্রসঙ্গে রাজ্য পুলিসের দুই কর্তা বলেন, যারা লাশ ফেলে দেওয়া বা গুলি চালানোর কথা বলছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ নন। আমরা সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেব। ওই ভিডিওতে দৃশ্যমান পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়ারের দুই বিজেপি নেতাকে ইতিমধ্যে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিস। বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের কথায়, ‘দলকে বদনাম করতে ওই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। আমরা আইনের দ্বারস্থ হব।’ একইসঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, মঙ্গলবার ছাত্রদের উপর যদি আক্রমণ নেমে আসে, বিজেপি নিজের ব্যানারেই নবান্ন অভিযান করবে।  

    এদিকে, ওই ছাত্রসমাজের দুই আহ্বায়ক সায়ন লাহিড়ী (যাদবপুর মণ্ডলের বিজেপি যুবমোর্চার সম্পাদক) ও শুভঙ্কর হালদার (শিক্ষকতার সঙ্গেই নবদ্বীপের এবিভিপি তথা আরএসএস কর্মী, যাঁর বিরু঩দ্ধে এক মহিলাকে যৌন হেনস্তার অভিযোগে মামলা রয়েছে নবদ্বীপ থানায়, কেস নম্বর-৬০৮/১৪) সাংবাদিকদের প্রশ্নের প্যাঁচে নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। এই পর্বে মহিলা সাংবাদিকদের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেন শুভঙ্কর। প্রেস ক্লাবের সাংবাদিক সম্মেলনে প্রতিবাদের ঢেউয়ে গুটিয়ে যান আরএসএস কর্মী। নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় সামনে এলেও, সায়নের দাবি—গোটা কর্মসূচিটাই অরাজনৈতিক।  
  • Link to this news (বর্তমান)