• বাজেয়াপ্ত জিনিসে কেন দুই ডাক্তারের আঙুলের ছাপ, সিবিআই তথ্যে রহস্য
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ৯ আগস্ট সকাল। সেমিনার রুমে চিকিৎসকদের সঙ্গে থিকথিক করছে ভিড়। এসে পড়েছেন হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষের ডান হাত বলে পরিচিত দেবাশিস সোম। এমনকী আইনজীবীও। হাজির বহু তরুণ-তরুণী।—ক্রাইম সিনের এমনই একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোমবার (এর সত্যতা বর্তমান যাচাই করেনি)। আর তারপরই আলোড়ন। কীভাবে এত লোক ঢুকে পড়ল ঘটনাস্থলে? নড়েচড়ে বসেছে সিবিআইও। এতদিন তথ্য-প্রমাণ লোপাটের তত্ত্বেই ভর করে তদন্ত চালাচ্ছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সি। এবার একটি ‘ভাইরাল ভিডিও’ হস্তগত হওয়ায় বাস্তবেই ফুটছে সিবিআইয়ের অন্দরমহল। তাই ভিডিও দেখার পরই তারা ডেকে পাঠিয়েছে দেবাশিসবাবু সহ অন্যদের। তবে সোমবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে লালবাজারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থল সম্পূর্ণ ঘেরা ছিল। সেমিনার রুমের যে অংশে ভিড় দেখা যাচ্ছে, তা ‘কর্ডনড এরিয়া’র বাইরে।

    পুলিসের থেকে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের পাশাপাশি ওইদিন কেউ যদি কোনও ছবি তুলে থাকে বা ভিডিও করে থাকে, সেইসবও জোগাড় করছেন তদন্তকারী অফিসাররা। এই ভিডিও তাঁদের তত্ত্ব প্রমাণে হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, ক্রাইম সিনের ওই ভিডিওয় উপস্থিত অনেককে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ওই ভিড়েই রয়েছেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ এক আইনজীবী ও ডেটা এন্ট্রি অপারেটর। সিবিআইয়ের প্রশ্ন, ঘটনাস্থলে তাঁরা কী করছিলেন? সন্দীপ নিজেই তাঁদের ফোন করে সেমিনার রুমে আসতে বলেন। সেখানে একদফা বৈঠকও হয় তাঁদের মধ্যে। সিবিআইয়ের দাবি, বারবার যাতায়াতে অনেক তথ্য-প্রমাণ নষ্ট হয়েছে। বহিরাগতদের নিয়ে আসাটা পরিকল্পনামাফিক বলেই দাবি করছে সিবিআই।

    এরইমধ্যে রহস্য আরও বাড়িয়েছে দুই জুনিয়র ডাক্তারের আঙুলের ছাপ। সেমিনার হল থেকে বাজেয়াপ্ত কিছু জিনিসে তাঁদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়া গিয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, ওই দু’জনকে যে সন্দীপবাবু সকালে ফোন করেছিলেন, তার প্রমাণ মিলেছে। সিবিআইয়ের এক কর্তার দাবি, ওই দুই ডাক্তার ঘটনাস্থলে গিয়ে জিনিসপত্র সরাতে শুরু করেন। তখন মৃতদেহ সেখানেই পড়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে কী সরানো হয়েছে, তা এখনও জানতে পারেননি তদন্তকারীরা। তবে কিছু জিনিসে তাদের আঙুলের ছাপ রয়ে গিয়েছে। তারপরই চার জুনিয়র ডাক্তারের আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সূত্রের খবর, ওই ছাপের সঙ্গে দুই জুনিয়র ডাক্তারের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলেছে। অথচ, দু’জনই দাবি করছেন, সেদিন ওখানে তাঁরা যাননি। রাতে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়ার সময় হাত লেগে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বয়ান সন্তোষজনক না হওয়ায় ফের ওই দুই জুনিয়র ডাক্তারের পলিগ্রাফ করায় এজেন্সি। আবার লাই ডিটেক্টরে বসতে হয়েছে বাকি দুই চিকিৎসক, সঞ্জয় ঘনিষ্ঠ সিভিক এবং স্বয়ং সন্দীপকেও। ইতিমধ্যে তাঁর মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে সিবিআই।

    তবে কলকাতা পুলিসের ডেপুটি কমিশনার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় সোমবার লালবাজারে বলেন, ‘সেমিনার হলের দৈর্ঘ্য ৫১ ফুট, প্রস্থ ৩২ ফুট। দেহ যেখানে উদ্ধার হয় সেখান থেকে ৪০ ফুট অংশ ঘেরা ছিল। বাকি ১১ ফুটের মধ্যে সকলকে দেখা গিয়েছে। আর যাঁদের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রত্যেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে ওখানে এসেছিলেন। অধিকাংশই ছিলেন ডাক্তার বা পড়ুয়া। ঘেরা অংশে তদন্তকারী অফিসার, ফরেন্সিক টিম, তরুণীর বাবা-মা, ফটোগ্রাফার-ভিডিওগ্রাফার ছাড়া আর কেউ যাননি। সিবিআই প্রশ্ন তুলছে, এমন অপরাধে পুরো ঘরকেই প্লেস অব অকারেন্স বা ঘটনাস্থল হিসেবে ধরা হয়। বাইরের কাউকে সেখানে যেতে দেওয়া হয় না। সেমিনার রুমের দরজা একটা হওয়ায় সেখান দিয়েই অপরাধী ঢুকেছে এবং বেরিয়েছে। এত লোক যাতায়াত করায় অভিযুক্তের পায়ের ছাপ এবং প্রমাণ নষ্ট হয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)