• কর্মবিরতির ১৭ দিন, ডায়ালিসিসের চ্যানেল করার লোকই নেই, ভর্তি নিল না আর জি কর
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: কিডনির সমস্যা। জল জমেছে পেটে। ফুলছে পা দুটোও। তাও হাসপাতালে আসার ভরসা পাননি বাগুইআটির সবিতা নাথ। দিন গুনেছেন, কবে থামবে ঝামেলা। আন্দোলন? সায় আছে তাঁরও। কিন্তু বৃদ্ধার শরীর যে আর সঙ্গ দেয় না। যখন শুনলেন, হাসপাতালে পরিষেবা আবার শুরু হয়েছে... ধড়ে প্রাণ এসেছিল। ভেবেছিলেন, এ যাত্রায় সুরাহা হল। ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে সোমবার পৌঁছেছিলেন আর জি করে। কিন্তু ডাক্তাররা জানিয়ে দিলেন, ডায়ালিসিসের চ্যানেল এখানে হবে না। লোক নেই। যেতে হবে এসএসকেএম। মাথায় বাজ ভেঙে পড়েছিল বৃদ্ধার। 

    আউটডোরের সামনে চেয়ারে বসেছিলেন। হাতে গুচ্ছ প্রেসক্রিপশন। চোখে-মুখে হতাশা। কথায় কথায় বললেন, ‘২২ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। চারবার ডায়ালিসিস হয়েছে। ১ আগস্ট ছুটি দিয়ে ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, আটদিন পর আবার আসতে হবে। অবস্থা বুঝে আবার ডায়ালিসিস হবে। হাসপাতালে ঝামেলা শুরু হওয়ায় ভয়ে এদিকপানে আসিনি। নার্সিংহোম যাওয়ার টাকাও নেই। আর না পেরে আজ এসেছিলাম। কিন্তু ডায়ালিসিসের চ্যানেল করারই লোক নেই! এত বড় হাসপাতালে! তাহলে কেমন পরিষেবা শুরু হয়েছে? ডাক্তারবাবু বললেন, পিজি হাসপাতাল থেকে ডায়ালিসিসের জন্য গলার কাছে চ্যানেল করিয়ে আনুন। ওটা দেখে উনি বলবেন, কবে ডায়ালিসিস হবে।’ 

    বৃদ্ধার ছেলে শম্ভু নাথ বলেন, ‘পেট, হাত-পা ফুলে যাচ্ছে। পিজিতে বুধবার যাব। ওরা চ্যানেল করবে কি না জানি না। উপায় না হলে এখানেই ফিরতে হবে। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের যন্ত্রণায় কার কী আসে যায় বলুন!’ বিড়বিড় করে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধা। কান পেতে শোনা গেল... ‘আমাকে আরও কিছুদিন বাঁচতে হবে। মরে গেলে ছেলেটা ভেসে যাবে। ওর এখনও বিয়ে হয়নি। সব ঠিক থাকলে আরও কয়েকবার ডায়ালিসিস হয়ে যেত। সুস্থ হয়ে যেতাম।’ জোড় হাতে আকাশের দিকে তাকালেন সবিতাদেবী—‘ছেলেটার গতি হওয়ার আগে কোনও অঘটন ঘটিও না ঠাকুর।’
  • Link to this news (বর্তমান)