• বিজেপির দাদাগিরি, কল্যাণীতে বন্ধ হচ্ছে এলপিজি প্লান্ট?
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কল্যাণীতে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের বটলিং প্লান্টে অন্দোলন অব্যাহত। বিজেপির সক্রিয় মদতে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলছে বিক্ষোভ। সিলিন্ডার পরিবহণ সংক্রান্ত টেন্ডারকে কেন্দ্র করে যে সমস্যার সূত্রপাত, গত এক মাসে তার জল গড়িয়েছে অনেক দূর। টানা আন্দোলনের জেরে কাজ চলছে ঢিমেতালে। কারখানার শীর্ষকর্তাদেরই প্লান্টে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কয়েকদিন আগে এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটরদের একটি প্রতিনিধি দল প্লান্টে ঢুকতে গেলে তাঁদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। তারপরও পরিস্থিতি বদলায়নি। সূত্রের খবর, এই অবস্থায় ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ কল্যাণী প্লান্ট বন্ধ করে দিতে চাইছে। ইতিমধ্যে সংস্থার হেড অফিসে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সরকারিভাবে অবশ্য এমন কোনও প্রস্তাবের কথা স্বীকার করেনি ইন্ডিয়ান অয়েল। 

    টেন্ডার নিয়ে মতবিরোধে আন্দোলনের সূচনা হলেও এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্লান্টে শ্রমিকদের বঞ্চনা, দুর্নীতি, কর্মী ছাঁটাই, বেআইনিভাবে লোক নিয়োগের মতো ইস্যুগুলি। এর প্রতিবাদে কল্যাণীর বিজেপি বিধায়ক অম্বিকা রায়ের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে শ্রমিক সংগঠন বিএমএসের (ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ) প্রতিনিধিরা। আন্দোলনের জেরে ইতিমধ্যেই ইন্ডেন গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। নদীয়া, হুগলি ও উত্তর ২৪ পরগনার বড় অংশে বুকিংয়ের পর বেশ কয়েকদিন লেগে যাচ্ছে সিলিন্ডার পেতে। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক শোষণ চলছে এখানে। ইন্ডিয়ান অয়েল একজন শ্রমিক পিছু প্রায় ৯০০ টাকা মজুরি দিলেও ঠিকাদার মাত্র ৪০০ টাকা দিচ্ছেন। বাকি টাকা ঠিকাদার সংস্থা ও প্লান্টের আধিকারিকদের একাংশের পকেটে ঢুকছে বলে অভিযোগ। আন্দোলনকারীদের আরও দাবি, এসব বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান চেয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলা হলেও কিছুই হয়নি। তাই আন্দোলন ছাড়া তাঁদের আর কোনও রাস্তা নেই। অম্বিকা রায় বলেন, ‘পরিষেবা যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকে নজর রেখেই শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন চলছে। এখন অনেকে নানা কথা রটাচ্ছে আমাদের আন্দোলনকে দমানোর জন্য।’ 

    তবে বটলিং প্লান্ট বন্ধ করার কথা মানতে চাননি ইন্ডিয়ান অয়েলের কর্তারা। তাঁদের কথায়, ‘একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কোনও প্লান্ট বন্ধের সিদ্ধান্ত কখনও আঞ্চলিক স্তরে নেওয়া যায় না। তার জন্য হেড অফিসের সম্মতি দরকার।’ তবে পরিস্থিতি যে যথেষ্ট সঙ্গীন, মানছেন তাঁরা। কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, একটি কারখানায় দিনের পর দিন সেখানকার কর্তারাই ঢুকতে পারছেন না। এ তো সাধারণ কারখানা নয়। এলপিজির মতো দাহ্য পদার্থ নিয়ে কাজ। সেখানে যদি কর্তৃপক্ষই না ঢুকতে পারে, তাহলে কোনও অঘটন ঘটলে দায়িত্ব কে নেবে? এভাবে দিনের পর দিন চলতে পারে না। তাঁদের আরও বক্তব্য, বিষয়টি এতটাই স্পর্শকাতর জায়গায় পৌঁছেছে যে মুখ্যসচিব, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে বৈঠক করতে হয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েলের শীর্ষমহলকে। দরবার করা হয়েছে জেলাশাসকের কাছে। কারখানায় সর্বক্ষণ পুলিসি নিরাপত্তা দেওয়ার আর্জি জানানো হলেও এখনও পর্যন্ত তা মানা হয়নি বলে খবর। সাময়িকভাবে পুলিসি টহল চললেও নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত হতে পারছেন প্লান্টের কর্তা ও কর্মীরা। অগত্যা কর্তাদের একাংশ বলছেন, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে নিরাপত্তার খাতিরেই কারখানা বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই। 
  • Link to this news (বর্তমান)