• দ্বাদশের ফলে জুুড়বে নবম থেকে একাদশের নম্বরও, সুপারিশ এনসিইআরটির
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দ্বাদশ শ্রেণির মার্কশিটে নবম থেকে একাদশের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরও যোগ করতে হবে। ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)-এর অধীন বিধিবদ্ধ সংস্থা ‘পরখ’ এই প্রস্তাব দিয়েছিল। জুলাইয়ে জমা পড়া সেই প্রস্তাব এবার শিক্ষামন্ত্রকে জমা দিয়েছে এনসিইআরটি। এটি কার্যকর হলে স্কুলশিক্ষায় একটি বড়সড় পরিবর্তন আসবে বলেই মনে করছে শিক্ষক মহল। এর পাশাপাশি, এই প্রস্তাবকে সমালোচনা করে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবও তুলছেন শিক্ষকরা।

    প্রস্তাব অনুযায়ী, নবম শ্রেণির প্রাপ্ত নম্বরের ১৫ শতাংশ, দশমের ২০ শতাংশ এবং একাদশের ২৫ শতাংশ নম্বর যোগ হবে দ্বাদশ শ্রেণিতে। বাকি ৪০ শতাংশ নম্বর যুক্ত হবে দ্বাদশ শ্রেণি থেকে। শুধু তাই নয়, এই শ্রেণিগুলিতে উচ্চশিক্ষার মতো ক্রেডিট সিস্টেম চালুর প্রস্তাবও রয়েছে। নবম এবং দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ৪০ ক্রেডিটের মধ্যে ৩৬ ক্রেডিট অর্জন করতেই হবে। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের অর্জন করতে হবে ৪৪-এর মধ্যে ৩৬ ক্রেডিট। তাহলেই তাদের উত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য করা হবে। প্রসঙ্গত, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-তেও এর ইঙ্গিত ছিল। তা শেষপর্যন্ত আরও সুসংহত করে পেশ করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে দশমের পরীক্ষা তুলে দিয়ে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির একটি পরীক্ষার কথাই বলা ছিল। তবে, তা এখনও কোথাও কার্যকর করা হয়নি। এমনকী, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানাচ্ছেন, দশম এবং দ্বাদশে সেমেস্টার পদ্ধতি চালু করা হবে ২০২৫ সাল থেকে। সেই পদ্ধতির প্রথম পরীক্ষা হবে ২০২৬ সালে। তাই, দশমের পরীক্ষা উঠে না গেলেও আপাতত এনসিইআরটির প্রস্তাবিত পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহলের দাবি।

    মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী দশমের পরীক্ষা উঠে যাওয়ার কথা। এরাজ্যে তো তা হচ্ছে না। এখানে প্রয়োজন হলে দশমের মার্কশিট ছাত্রছাত্রীরা সংশ্লিষ্ট জায়গায় দাখিল করতে পারবে। তাই পর্ষদ অনুমোদিত স্কুলগুলির জন্য অর্ডারটি প্রাসঙ্গিক হবে না বলেই মনে করি। তাছাড়া, শিক্ষাদপ্তরকে তার আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘শিক্ষা যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। তাই রাজ্য সরকার এটি কার্যকর করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’ তবে তিনি যোগ করেন, উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের দরজা। তাই, কেন্দ্র যদি এমন নিয়ম করে যে নয়া পদ্ধতির মার্কশিট ছাড়া কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে কেউ ভর্তি হতে পারবেন না, বা কেন্দ্রীয় অভিন্ন প্রবেশিকা সিইউইটি বা কুয়েটে অংশ নিতে পারবেন না, তাহলে রাজ্যকেও অন্যভাবে ভাবতে হবে। একইভাবে, ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ডিগ্রির বৈধতা রক্ষার উদ্দেশ্যেই চার বছরের স্নাতক কোর্স চালু করতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য।

    তবে, নয়া পদ্ধতির বেশকিছু সমস্যাও রয়েছে। এমাসের ২১-২২ তারিখে ‘পরখ’-এর প্রস্তাব নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠক ছিল। তাতে অন্য সমস্যায় প্রতিনিধি পাঠাতে পারেনি সংসদ। এই প্রসঙ্গে সভাপতির বক্তব্য, যারা দশম শ্রেণির পরে বৃত্তিমূলক বা কারিগরি শিক্ষায় যেতে চায়, তারা সমস্যায় পড়বে। আবার অনেক দরিদ্র ছাত্রছাত্রী দশমের সার্টিফিকেট নিয়ে বিভিন্ন জীবিকায় যোগ দেয়। তাদের আরও দু’টো বছর পড়াশোনা করতে হবে। তাই, এই নিয়ম চালু করার আগে সব বিষয় ভেবে নেওয়া উচিত।
  • Link to this news (বর্তমান)