নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘স্ত্রীর গল ব্লাডার অপারেশন হবে। দু’দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ওষুধ দিতে মাঝে মধ্যেই উপরে যেতে হচ্ছে। যখনই যাচ্ছি দেখছি কোনও চিকিৎসক নেই। তাঁদের কাজ করছেন নার্সরা। অপারেশন থিয়েটারেও একই অবস্থা। স্ত্রীও জানালেন, সিনিয়র চিকিৎসককে সাহায্যে করছিলেন শুধু নার্সরাই। কোনও হাউস স্টাফ বা জুনিয়র চিকিৎসককে তিনি দেখতে পাননি। অপারেশনের পরও চিকিৎসক এসে দেখেননি। সবটাই ছেড়ে দিয়েছেন নার্সদের উপর’-হতাশ মুখে বললেন অশোকনগরের বাসিন্দা কাজী মফিসুর ইসলাম।
আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ১৮ দিন হল। হাসপাতালের সার্বিক পরিষেবার বেহাল দশা নিয়ে হতাশ ও আতঙ্কিত সব রোগীর পরিবারই। গত পাঁচদিন ধরে পিজি হাসপাতালে চক্কর কাটছেন মফিসুর। তাঁর স্ত্রী রোহিনী বেগমের হয়েছে গলব্লাডারের স্টোন অপারেশন। অপারেশন আগেও তিনি পিজিতে চিকিৎসককে দেখাতে এসেছিলেন। ‘কিন্তু তখন এমন দশা ছিল না,’ দাবি মফিসুরের। বললেন, হাসপাতালের বেড ফাঁকা। ডাক্তার নেই রোগীও নেই। কিন্তু রোগী কম বলে চিকিৎসা যে ভালো হচ্ছে তা কিন্তু নয়।’
তিনি সহ আরও কয়েকজন রোগীর পরিজনের বক্তব্য, ‘চিকিৎসক আর একজন নার্সের কাজের মধ্যে অনেক পার্থক্য। নার্সরা তাঁদের কাজ নিয়ে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তাঁরা তো ডিগ্রিধারী চিকিৎসক নন। ফলে চিকিৎসকদের দায়িত্ব সামলাতে গেলে ভুলত্রুটির সম্ভাবনা থাকেই। ফলে মানুষের জীবন নিয়ে এখন টানাটানি পড়ছে। কোনও বিপদ ঘটলে তার দায় কে নেবে?’
আর জি করের ঘটনার পর কর্মবিরতি চলছে। তুলতে নারাজ জুনিয়র চিকিৎসকরা। ফলে রোগীর চাপ সামলাতে হচ্ছে নার্সিং স্টাফদের। পিজি হাসপাতাল সূত্রে খবর, জুনিয়র চিকিৎসক সংখ্যা প্রচুর। তাঁরা কেউ কাজ করছেন না। কিন্তু হাসপাতালের পরিষেবা বজায় রাখতে নার্সদের দিয়ে সেই কাজ করানো হচ্ছে। জানা গিয়েছে, ব্লাড রিকুইজিশন থেকে শুরু করে রক্ত নেওয়া সবটাই করছে নার্সরা। তিন-চার জন ইন্টার্ন চিকিৎসক অথবা দু’জন হাউজ স্টাফের কাজ করতে হচ্ছে নার্সিং স্টাফকে। ফলে অনেকেরই ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে নার্সিং স্টাফদের মধ্যেও তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ। তবে তাঁরা কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বললেন, ‘নির্যাতিতার সঠিক বিচারের দাবিতে গোটা রাজ্য সামিল। দোষীর শাস্তি চান না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বিচারের দাবিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যাহত করার কোনও অর্থ নেই।’