• হাসপাতালে ওষুধই ঢোকেনি, অথচ পেমেন্ট পেয়েছে কোম্পানি, নয়া তথ্য পেল সিবিআই
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: খাতায় কলমে টেন্ডার পাওয়া কোম্পানি ওষুধ দিয়েছে। মেডিসিনের স্টোর রুমে থাকা খাতায় সেটি রেজিস্ট্রি হয়েছে ব্যাচ নম্বর সহ। সেটি আবার হাসপাতালের কম্পিউটারে তুলেছেন কর্মীদের একাংশ। কিন্তু বাস্তবে রোগীদের দেওয়ার জন্য ওষুধের সিংহভাগ পৌঁছয়নি হাসপাতালে। অথচ কোম্পানিগুলি টাকা পেয়ে গিয়েছে। টেন্ডার প্রাপক কোম্পানি নিজে ওষুধের দোকান খুলে এই মাল বিক্রি করেছে দিনের পর দিন। বা বরাত প্রাপক সংস্থা সেগুলি খোলা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। আর জি করে আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে নেমে ওষুধ গরমিলের তথ্য মিলেছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। তাই সিবিআই এখন অঙ্ক কষে দেখছে, ওষুধ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কত টাকা নয়ছয় হয়েছে। এই দুর্নীতির বিষয় জানতে সোমবার দীর্ঘক্ষণ জেরা করা হয় আর জি করের প্রাক্তন সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠ ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ ঘনিষ্ঠ দেবাশিস সোমকে। এদিকে এই দুর্নীতির তদন্ত মনিটর করতে সোমবার দিল্লি থেকে কলকাতায় পৌঁছেছেন সিবিআইয়ের অতিরিক্ত ডিরেক্টর মনোজ শশীধর।

    আর জি করে আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে সিবিআই জেনেছে, হাসপাতালে ওষুধ সরবরাহের জন্য আইনমাফিক টেন্ডার করতেন প্রাক্তন অধ্যক্ষ। বিভিন্ন কোম্পানি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেও সন্দীপ ঘনিষ্ঠ দু’-তিনটি কোম্পানি ওষুধ সরবরাহের বরাত পেত। এর বিনিময়ে মোটা টাকা কমিশন প্রাক্তন অধ্যক্ষ পেতেন বলে সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছেন সেখানকার কর্মীরা। তদন্তকারীরা কম্পিউটারে নথিভুক্ত ওষুধের স্টক লিস্ট মেলাতে গিয়ে বড়সড় কেলেঙ্কারির খোঁজ পান। তদন্তকারীদের নজরে এসেছে, ২০২১-২৪ পর্যন্ত কোটি কোটি টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে বলে বিল রয়েছে। কিছু ওষুধ এসেছে, বাকি আসেনি। এমনকী যে ওষুধ এসেছে, সেখানে পরিমাণে গরমিল আছে। রোগীদের ওষুধ বেশির ভাগ সময় বাইরে থেকে কিনে আনতে হতো বলে অভিযোগ। টেন্ডার প্রাপ্ত সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পারছেন, ওষুধ তারা কম দিত। হাসপাতালে এক শীর্ষকর্তার কথামতো তারা ওষুধের দোকান খোলে। এর ব্যবস্থা করে দেন সেখানকার কিছু কর্তা ব্যক্তি, যাঁদের সঙ্গে শীর্ষকর্তার অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক ছিল। বিগত চার বছরে বরাত পাওয়া কোম্পানিগুলি একাধিক দোকান খুলেছে। এমনকী দামি দামি ওষুধ তারা খোলা বাজারে বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করেছে। কোভিডের সময় এই দুর্নীতি লাগামছাড়া হয়। ওই সময় রোগী না এলেও দেখানো হয়েছে রোগী এসেছেন এবং ওষুধ দিয়েছে হাসপাতাল। ওষুধ বাজারে বিক্রি করে বরাত পাওয়া কোম্পানি যে টাকা পেয়েছে, তার একটা বড় ভাগ হাসপাতালের শীর্ষকর্তার কাছে পৌঁছে গিয়েছে। এই টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা হয়েছে, সেটা জানার চেষ্টা চলছে। 

    দুর্নীতি মামলার তদন্তে সন্দীপ কতটা সুবিধা পেয়েছেন, সেটা জানতে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথি ব্যাঙ্কগুলির কাছে চাওয়া হয়েছে। এখানে বিগত চার বছরে কী পরিমাণ লেনদেন চলেছে, তার মূল্যায়ন হচ্ছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।  অন্যদিকে, আজ মঙ্গলবার সন্দীপ ঘনিষ্ঠ দুই ঠিকাদার বিপ্লব সিংহ ও সুমন হাজরাকে তলব করেছে সিবিআই।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)