• গ্যালিফ স্ট্রিটের শখের হাটে ‘সক্রিয়’ চোরাকারবারি, পশুপাখি বিক্রির নামে প্রতারণা ঠেকাতে চালু ওয়েবসাইট
    বর্তমান | ২৭ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শখ করে কিনে নিয়ে গিয়েছেন বিদেশি কুকুর। একবার স্নান করানোর পর থেকে তার শরীর থেকে রং উঠতে শুরু করল! জলের ঝাপটা পড়তেই কুকুরের গা থেকে গলে গলে পড়তে শুরু করল কালো রং! বাড়িতে পুষবেন বলে পাখি কিনে নিয়ে গেলেন। কেনার সময় সুস্থ ছিল, বাড়ি ফিরতেই ঝিমিয়ে পড়ল সে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বেঘোরে মারাই গেল অবলা প্রাণীটি। এরকম একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে, কারণ পোষ্য বিক্রির নামে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর জালিয়াতি চালাচ্ছে রমরমিয়ে। পশুপাখির চোরাকারবারিরাও সক্রিয়। তারা ‘শখের হাট’-এর সুনাম ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ কারবার। বাগবাজার এলাকার গ্যালিফ স্ট্রিটের ‘শখের হাট’ (পশু-পাখির সাপ্তাহিক হাট) থেকে পোষ্য কিনে এভাবেই ঠকতে হচ্ছে অনেককে। এই ধরনের অভিযোগ দিনের পর দিন বেড়েই চলছিল। অবশেষে অসাধু কারবারিদের প্রতিহত করতে উদ্যোগী হল বাগবাজার শখের হাট ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার সমিতি। ২৭৬ বছরের প্রাচীন এই হাটের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে তারা। সেখানে কুকুর, পায়রা থেকে শুরু করে নানা পশুপাখির বৈধ বিক্রেতাদের ছবি, নাম, ফোন নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়েছে। শখের পোষ্য কিনতে এসে প্রতারণার শিকার যাতে কেউ না হন, তা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ বলে জানাচ্ছেন সমিতির কর্তারা।

    উত্তর কলকাতার গ্যালিফ স্ট্রিট পশুপাখিপ্রেমীদের কাছে অতি পরিচিত নাম। প্রতি রবিবার এখানে হাট বসে। ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। হাঁস, মুরগি, খরগোশ, ইঁদুর, কুকুর, মাছ, পায়রা—পোষ্যদের হরেক সম্ভার নিয়ে হাজির হন বিক্রেতারা। কলকাতা তো বটেই, জেলার দূরদূরান্ত থেকেও বহু মানুষ হাটে আসেন। সম্প্রতি ওয়েলফেয়ার সমিতির সদস্যদের নজরে এসেছে, বেশ কিছু লোক অসাধু কারবার চালাচ্ছে। চোরাকারবারিরা ব্যবসায়ীদের ভিড়ে মিশে গিয়ে অবৈধ বেচাকেনা চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষ সঠিকভাবে বুঝতেই পারছে না, কে বৈধ বিক্রেতা, আর কে চোরাকারবারি।  

    বাগবাজার শখের হাট ব্যবসায়ী ওয়েলফেয়ার সমিতির ওয়েবসাইটটি হল, ‘বিএসএইচবিডাব্লুএস ডট পেট’। এই ওয়েবসাইটে ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের নাম, ছবি, ফোন নম্বর সহ বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ব্যবসায়ীদের যাবতীয় বিবরণ। সমিতির সভাপতি প্রণব মিত্র বলেন, ‘হঠাৎ করে এসে পশুপাখি বিক্রি করে চলে যাচ্ছে কিছু লোক। পরবর্তী সময়ে তাদের আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের কারও কাছ থেকে পশুপাখি কিনে কেউ ঠকলেও তাদের আর ধরা যাচ্ছে না। উল্টে সাধারণ ক্রেতা আমাদের সমিতিকে ভুল বুঝছে। তাছাড়া, শখের হাটের নাম ব্যবহার করে অনলাইনেও প্রতারণা চলছে বলে আমাদের কাছে খবর। আমাদের ওয়েবসাইট থেকে মানুষ সহজেই আসল-নকল ফারাক করতে পারবে।’ কোষাধ্যক্ষ উপেন্দ্রনাথ গোস্বামী বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য হল সাধারণ মানুষকে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচানো। আমাদের সদস্য ও বৈধ বিক্রেতাদের সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য পাওয়া যাবে ওয়েবসাইটে। অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। কেউ পশুপাখি কিনে নিয়ে গিয়ে সমস্যায় পড়লে ফোন করে পরামর্শও নিতে পারবেন।’
  • Link to this news (বর্তমান)