এই সময়: আরজি করের ঘটনায় জাস্টিসের দাবি যাতে দুর্গাপুজোর আঙিনায় না উঠে আসে, তা নিশ্চিত করতে মাঠে নেমে পড়েছে পুলিশ। কোথাও ঠারেঠোরে, কোথাও আবার প্রকাশ্যে সতর্ক করা হচ্ছে পুজো উদ্যোক্তাদের।জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ লিখিত ভাবে জানিয়েছে, পুজোর থিম ও ভাবনা আগেভাগে জানাতে হবে পুলিশকে। প্রয়োজনে পুলিশ তা পরিবর্তন বা পরিমার্জন করবে। যদিও সেখানে কোথাও বলা হয়নি কী করা যাবে বা যাবে না।
নিউটাউনের ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানা (ইসি পিএস) সেখানকার পুজো কমিটিগুলিকে ডেকে জানিয়েছে, পুজোর থিম বা পুজো মণ্ডপের আশপাশে কোনও ভাবেই আরজি করের ঘটনা সংক্রান্ত কোনও ব্যানার-পোষ্টার-হোর্ডিং লাগানো যাবে না। থানার আইসি-র দাবি, তিনি এমন কিছু বলেননি।
শান্তিপূর্ণ ভাবে, বিধি মেনে পুজো করতে যা যা করণীয় শুধু তাই করতে বলা হয়েছে। ইসি পিএস এলাকার ১২টি পুজোর উদ্যোক্তাদের অনেকের অভিযোগ, থানার আইসি প্রথমে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে, পরে প্রায় সরাসরি জানিয়ে দেন, পুজোয় কোনও ভাবে আরজি করের ঘটনা নিয়ে কোনও থিম করা যাবে না। এমনকী বিচার চেয়ে কোনও পোষ্টার-হোডিং-ব্যানারও লাগানো যাবে না।
উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, নির্দেশ পালিত হল কি না, পুলিশ তা সরেজমিনে দেখে আসবে বলেও জানানো হয়েছে। কলকাতার বহু আবাসনের পুজো সরকারের এই অনুদান পেলেও, ইসি পিএস এলাকার আবাসনের পুজোগুলি সেই অনুদান পায় না। ফলে এই ‘স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ’ তারা ভালো ভাবে নিচ্ছে না। তাদের মতে, আবাসনের মধ্যে বিভিন্ন মানসিকতার বাসিন্দা থাকেন। পুলিশের এমন খবরদারি হলে এর ফল সূদুরপ্রসারী হতে পারে বলেও আশঙ্কা তাঁদের।
মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়ার মতো জেলাতেও পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, ‘নির্দেশ’ মতোই তাঁরা কাজ করছেন। তাঁদের দাবি, ১৪ অগষ্ট রাতের মিছিলে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে বিধাননগর পুলিশের এক মহিলা কর্মী মার খান। তাঁর চোখে চোট লাগে। অভিযোগ, নির্দেশ পেয়ে ব্যক্তিগত সোশ্যাল সাইটের পেজেও সেই ছবি প্রচার করতে বাধ্য হন পুলিশকর্মীরা।
অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ অফিসার বলেন, আরজি করকে কেন্দ্র করে ‘মা তুমি এসো না.....এই বিচারহীন পৃথিবীতে...’ বলে শাসক-ঘনিষ্ঠ এক শিল্পী যে গান লিখেছেন, তাতেও সেই বিচারই চাওয়া হয়েছে। আর তাঁর গানও যথেষ্ট মানুষের মনে দাগ কাটবে, তা শাসকও জানে। তা হলে দুর্গাপুজোয় এই খবরদারি কী মধ্যবিত্তকে আরও অসন্তুষ্ট করবে না?
আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে পুজোয় সরকারি অনুদান ফেরানো শুরু হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের সাগরপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি সোমবার জন্মাষ্টমিতে খুঁটি পুজো করে জানিয়েছে, দুর্গাপুজোর জন্য সরকারের অনুদান তারা নেবে না।
তাদের দাবি, দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হলে অনুদান নেওয়ার বিষয়টি তারা বিবেচনা করবে। হুগলির উত্তরপাড়ার পরে কোন্নগর মাস্টারপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি রাজ্য সরকারের অনুদান বয়কট করেছে। বারাসত কলোনি মোড় অ্যাসোসিয়েশনও অনুদান প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।