এই সময়: কলকাতার সদর দপ্তরে সব সরকারি মহিলা কর্মী, পোস্ট ডক্টরাল ফেলো, সিনিয়র/জুনিয়র রিসার্চ ফেলো, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের কাজের সময় বেঁধে দিল কেন্দ্রীয় সংস্থা জ়ুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জে়ডএসআই)। সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিসেস (কনডাক্ট) ১৯৬৪ সালের বিধি অনুযায়ী, আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সকাল পৌনে ১০টা থেকে সন্ধ্যা সওয়া ৬টা পর্যন্ত অফিস টাইম বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।ওই সময়ের আগে ও পরে কেউ কাজ বা গবেষণা করতে চাইলে তাঁকে কর্তৃপক্ষর আগাম অনুমতি নিতে হবে। এমনকী, কোনও অবস্থাতেই সন্ধ্যা সওয়া ৬টার পর অফিসে থাকার অনুমতি নেই। এই বিজ্ঞপ্তি আরজি করের ঘটনার প্রেক্ষিতেই বলে জ়েডএসআই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়। যদি নর্মাল অফিস আওয়ার্স-এর বাইরে কাজের প্রয়োজন আছে বলে কেউ মনে করেন, তা হলে তাঁকে বা তাঁদের জে়ডএসআই-র কলকাতা অফিসের প্রধানের কাছে অনুমতি চাইতে হবে। আগাম অনুমতি না-নিলে সেই নিয়ম ভঙ্গকারী যাঁর অধীনে কাজ করছেন, ওই অফিসারকে জবাবদিহি করতে হবে।
নর্মাল অফিস আওয়ার্স-এর বাইরে অন্তত দু’জন মহিলা যদি একসঙ্গে বা দল বেঁধে গ্রুপে কাজ করতে চান, তখনই তাঁদের কাজ বা গবেষণার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে উল্লিখিত কোনও বিষয়ে কাজ বা গবেষণার প্রয়োজনের যথার্থতা না-থাকলে, শনি ও রবিবার, এবং জাতীয় ছুটির দিনে তাঁদের কাজের অনুমতি না-ও দেওয়া হতে পারে।
ঠিক এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন জে়ডএসআই-এর মহিলা কর্মীদের পাশাপাশি পড়ুয়া এবং গবেষকদের অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, দৈনন্দিন গবেষণার কাজ শেষ করতে অনেক সময়েই সন্ধ্যা সওয়া ৬টা বেজে যায়, তা হলে এই বিজ্ঞপ্তির কী অর্থ? তবে ওই ক্ষুব্ধ গবেষক ও পড়ুয়াদের কেউই সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে চাননি।
আরজি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৭ অগস্ট রাজ্য সরকার কর্মস্থলে মহিলাদের নিরাপত্তায় ১৭ দফা নির্দেশিকা জারি করে। তাতে বলা হয়েছিল, নাইট ডিউটি থেকে যেখানে যতদূর সম্ভব মহিলাদের অব্যহতি দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। গত ১৪ অগস্ট মেয়েদের রাত দখলের প্রথম ডাক দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী, এখন সমাজতত্ত্বের গবেষক রিমঝিম সিনহা।
জে়ডএসআই-এর বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে তিনি এ দিন বলেন, ‘আরজি করের ঘটনাই প্রমাণ করে দিয়েছে, রাতে যে সব মহিলা কাজ করেন, প্রশাসন তাঁদের ঠিক মতো নিরাপত্তাই দিতে পারছে না। আমরা কখনও মেয়েদের নাইট ডিউটি বন্ধের দাবি করিনি। কিন্তু সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে সব নির্দেশিকা দিচ্ছে, তার অনেকগুলোই এখন মেয়েরা যেন বাড়ির বাইরে না-বেরোয়, তারই নামান্তর।’
রিমঝিমের সাফ কথা, ‘আমরা ২০২৪ সালে মধ্যযুগে ফিরে যেতে চাইছি না। পড়াশোনা যখন করছি, তখন কেন নিজের পছন্দ মতো কাজ করব না?’ যদিও জে়ডএসআই-এর ডিরেক্টর ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘আমাদের তরফে মহিলা কর্মী এবং গবেষকদের জন্য যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, তা আমাদের স্ট্যান্ডার্ড স্ট্যাটুটরি অ্যাডভাইস। আমাদের এখানে নাইট ডিউটির চল নেই। যখনই যে কেউ নির্ধারিত সময়ের আগে ও পরে কাজ করতে চান, তাঁদের আগাম অনুমতি নিতেই হয়। আরজি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা শুধু সেটাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছি।’
তাঁর সংযোজন, শনি ও রবিবার ছুটির দিন ওই প্রতিষ্ঠানে অনেক ধরনের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়। বাইরের লোকও আসেন প্রচুর সংখ্যায়। তাঁদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কর্মী ও গবেষকদের আলাদা করতেই এই সচিত্র ও বিস্তারিত পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। সেটা সারাক্ষণ গলায় ঝুলিয়ে না-রাখলে বাইরের লোকদের সঙ্গে নিজেদের কর্মী ও গবেষকদের আলাদা করা সম্ভব নয় বলে ডিরেক্টরের বক্তব্য।