এই সময়: জুনিয়র আবাসিক ডাক্তার বা পিজিটি-রা আদতে প্রশিক্ষণরত চিকিৎসক। তাঁরা কর্মবিরতিতে থাকলে, মেডিক্যাল কলেজের পরিষেবা কিছুটা বিঘ্নিত হতে পারে ঠিকই। কিন্তু বিপর্যস্ত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তার পরেও হচ্ছে। তার কারণ হলো, পর্যাপ্ত নিয়োগ হয়নি দীর্ঘ দিন ধরে। তাই মেডিক্যাল কলেজের বিভিন্ন স্তরে অনেক পদ শূন্য, যা নিয়ে এবার সরব হচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ।এদিকে ন্যায়বিচারের দাবি না মেটা পর্যন্ত জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি চলছেই। সোমবার তাঁদের বক্তব্য, আসল দোষীদের আড়াল করছে স্বাস্থ্যভবন। তাই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, সরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসল পরিষেবা দেওয়ার কথা সরকারি চিকিৎসকদের। তার মধ্যে যেমন মেডিক্যাল অফিসাররা আছেন, তেমনই আছেন শিক্ষক-চিকিৎসকরাও।
প্রশিক্ষণরত পিজিটি বা পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিরা সেই পরিষেবায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন। কিন্তু তাঁরা কখনোই পরিষেবার মেরুদণ্ড হতে পারেন না। কিন্তু তাঁদের যে মেরুদণ্ড হিসেবে প্রতিপন্ন করা হচ্ছে, তার কারণ হলো, সরকারি চিকিৎসকের অভাব। মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়েনি শিক্ষক-চিকিৎসকের সংখ্যা।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে অন্তত ৭০০ অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, ৩০০ অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এবং ১০০ প্রফেসরের শূন্য পদ রয়েছে। সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, 'নিয়োগ হতে হতে বছর ঘুরে যায়। সেই মার্চ মাসে ৫৩৬ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর নিয়োগের বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল। কিন্তু তার পর সব চুপচাপ।'
তাঁদের দাবি, এই কারণেই জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলি এমন বিপাকে পড়েছে। সোমবার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের ডাকে একটি গণ কনভেনশন আয়োজিত হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রেক্ষাগৃহে। সেখানে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের নানা পেশার মানুষ হাজির হয়েছিলেন।
বক্তা হিসেবে চিকিৎসক সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন বিশিষ্টরাও। সমাজকর্মী বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, সঞ্চালক মীর আফসার আলি, অভিনেত্রী সোহিনী সরকার, অভিনেতা জিতু কমল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তাঁদের প্রস্তাব, শহরের কোনও একটি নির্দিষ্ট অংশে একটি অভিন্ন প্রতিবাদ মঞ্চ গড়ে তোলা হোক। সেখানে চালানো হোক গত ৯ অগস্ট আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের ন্যায়বিচারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন।
বক্তাদের মধ্যে সবচেয়ে ঝাঁজালো ভাষায় প্রতিবাদ করে সরকারকে তুলোধোনা করেন সোহিনী। তিনি বলেন, 'আমার সদ্যই বিয়ে হয়েছে। আমার স্বামীকে সে দিন বললাম, মা হবো? কোন দেশে মা হবো? আমার সন্তানকে পৃথিবীতে এনে এ রকম দেশে রেখে যেতে আমি চাই না।' তাঁর আশঙ্কা, আসন্ন পুজোর আনন্দে যেন আরজি করের ভয়াবহ ঘটনার কথা ভুলে গিয়ে প্রতিবাদের ভাষা না হারিয়ে ফেলে বঙ্গবাসী।
জাস্টিস ফর আরজি কর আন্দোলন প্রসঙ্গে মীর বলেন, 'এটা কয়েকদিনের আন্দোলন নয়। এটাকে যাঁরা হুজুগ বলছেন, যাঁরা ছোট করার চেষ্টা করছেন তাঁদের সামনে দেখলে থুতু ছেটাবেন।' মেডিক্যালের কনভেনশনের মতোই তপ্ত পরিবেশ ছিল এদিন আরজি করেও। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, কর্তৃপক্ষ প্রথমে ৯ অগস্টের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চাইছিল।
এর নেপথ্যে কাজ করছে একটি দুষ্ট চক্র। সেই চক্রই আবার সরকারি স্বাস্থ্য প্রশাসন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক। দুর্ভাগ্যের হলো, সরকার তাঁদের আড়াল করতে চাইছে। তাই ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলবে। এক আন্দোলনকারী পিজিটি-র প্রশ্ন, 'আমরাও কাজে ফিরতে চাইছি। তবে বিচার পাওয়ার প্রশ্নে যারা বাধা সৃষ্টি করছে, যদি তাঁরা সক্রিয় থাকে, তাদের আড়াল করা হয়, তা হলে কী ভাবে আমরা নিরাপদে কাজে ফিরতে পারবো?'