আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানে গোলমাল, অশান্তি ঠেকাতে পুলিশের নিরাপত্তার বজ্রআঁটুনির জেরে কার্যত পরিবহণ বনধের চেহারা হাওড়া শহরে। যদিও পুলিশ ও প্রশাসনের দাবি, বেসরকারি বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি চলাচলের ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। বেসরকারি বাস, মিনিবাস মালিক ও চালকরা গাড়ি না চালালে তার দায় প্রশাসনের নয়।বেসরকারি বাস মালিকদের দাবি, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা জুড়ে ব্যারিকেড থাকায় গাড়ি চালাতে ও যাত্রী পেতে অসুবিধার কারণে তাঁরা বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। হাওড়া শহরের বাসিন্দাদের অধিকাংশই বেসরকারি পরিবহণের ওপর নির্ভরশীল। নবান্ন ও তার লাগোয়া এলাকা জুড়ে সারি সারি ব্যারিকেডের জেরে কার্যত অবরুদ্ধ জিটি রোড, আন্দুল রোড, ফোরশোর রোড।
ফলে না চলছে বেসরকারি বাস, মিনিবাস, না চলছে ট্যাক্সি, না মিলছে আপ-ক্যাব। হাতে গোনা টোটো চলছে কেবল অলিগলিতে। সকাল থেকেই দক্ষিণ হাওড়ার দানেশ শেখ লেন, বটানিক গার্ডেন, বি ই কলেজ,বকুলতলা, নাজিরগঞ্জ, মৌড়িগ্রাম, বেতাইতলা, মন্দিরতলা, শিবপুর, কাজিপাড়া-সহ নানা বাস স্টপে কাতারে কাতারে অফিস যাত্রীদের ভিড়।
যাঁদের অধিকাংশই পরিবহণ না পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরাই অফিস বা জরুরি কাজে যেতে পেরেছেন যাঁদের নিজস্ব দু’ চাকা বা চার চাকা গাড়ি রয়েছে। হাওড়া শহরের অধিকাংশ বাসিন্দাদের বক্তব্য, গোলমাল-অশান্তি ঠেকাতে পদক্ষেপ করতে পুলিশ বা প্রশাসনকে কেউ নিষেধ করেনি।
কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের এমন পদক্ষেপের কী প্রয়োজন যাতে শহরের পরিবহণ ব্যবস্থাই বন্ধ হয়ে যায়? হাওড়ার বাসিন্দারা অনেকেই জানিয়েছেন, পরিবহণ সচল রেখে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করাই তো পুলিশ ও প্রশাসনের কাজ। তা না করে নবান্নকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রাখতে পুলিশ যেভাবে নানা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা জুড়ে পেল্লায় পেল্লায় ব্যারিকেড লাগিয়েছে তাতে মনে হচ্ছে প্রশাসনই যেন পরিবহণ ধর্মঘট পালন করছে। এর ফলে ভোগান্তির শিকার হলেন সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষই।
বেসরকারি বাস, মিনিবাস না চলায় কালীবাবুর বাজার, শিবপুর বাজার, বেতাইতলা বাজার, বকুলতলা বাজার, শিবপুর বাজার, বটানিক গার্ডেনের পাশে কোলে মার্কেট-সহ অধিকাংশ বাজারেই সব্জি ও মাছ বিক্রেতারা মালপত্র নিয়ে আসতেই পারেননি। ফলে নিত্য দরকারি আনাজপাতি, মাছ-মাংস কিনতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন লোকজন। পাড়ার দোকানপাট খোলা থাকলেও বাজারগুলিতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় নেই বললেই চলে।
দুর্ভোগের এখানেই শেষ নয়। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষকে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে বা ভর্তি থাকা রোগীদের খোঁজ নিতে বা খাবার দিতে যেতেও বিস্তর ভোগান্তি হচ্ছে সকাল থেকেই। দক্ষিণ হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে অসুস্থ রোগীদের নিয়ে যেতে অনেকেই অ্যাম্বুল্যান্স পাননি বলে অভিযোগ।
কারণ, রাস্তার ব্যারিকেড পেরিয়ে হাসপাতালে যেতে অস্বীকার করেছেন অনেক অ্যাম্বুল্যান্স চালকই। নবান্ন অভিযান শেষ হলেই কি সচল হবে পরিবহণ? বেসরকারি বাস, মিনিবাস মালিকরা জানিয়েছেন, অফিস টাইমের গুরুত্বপূর্ণ সময় গাড়ি চালানো যায়নি। নবান্ন অভিযান মিটতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলে যাত্রী না পাওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। তখন বাস চালালে আরও আর্থিক ক্ষতি।