রাস্তার ধারের নয়ানজুলি কিংবা বাড়ির পাশের ডোবায় পাট পচার গন্ধ জানান দিচ্ছে পুজো এসে গিয়েছে। ইতিমধ্যে পুজোকে ঘিরে পুজো কমিটি এবং প্রশাসনের মধ্যে তৎপরতাও শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে পুজোর বাজারেও কেনাকাটি শুরু হয়ে যাবে। আর মুর্শিদাবাদের মতো কৃষিপ্রধান জেলায় পুজোরে বাজার অনেকটাই নির্ভর করে পাটের দামের উপরে। গত বারের মতো এ বারেও একদিকে বৃষ্টির ঘাটতির জেরে পাট চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অন্য দিকে পাটের দামও কম রয়েছে।
যার জেরে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ীরা চিন্তায় রয়েছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, মুর্শিদাবাদের প্রধান অর্থকরী ফসল হল পাট। ফলে পাটের দামের সঙ্গে পুজোর বাজারের সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমরা বরাবরই লক্ষ্য করেছি পাটের দাম ভাল থাকলে, পুজোর বাজারে কেনাকাটা ভাল হয়। আবার পাটের দাম কম থাকলে পুজোর বাজারে কেনাকাটি আশানুরূপ হয় না।’’ কৃষকদের দাবি, এ বছরের পাট উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে পাটের দাম কুইন্টাল পিছু ৩৫০০-৪০০০ টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। পাট চাষের খরচ যে ভাবে বেড়েছে, তাতে এই দামে পাট বিক্রি করলে তাঁদের ক্ষতি হবে।
মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় প্রধান অর্থকরি ফসল পাট। আর পুজোর আগে আগেই মাঠ থেকে পাট উঠে পড়ে। সেই পাট বিক্রি করে চাষিরা অন্য কাজ যেমন করেন, তেমনই পুজোর বাজার সারেন। ফলে পাটের দাম ভাল থাকলে পুজোর বাজারে ভিড় বাড়ে কেনাকাটা বেশি হয়। আর পাটের দাম কম থাকলে পুজোর বাজারও মন্দা হয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এ বছর বৃষ্টির অভাবে পাট চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার উপরে পাটের দাম কুইন্টাল পিছু চার হাজারের নীচে নেমে গিয়েছে। যার জেরে আমরা খুব চিন্তায় রয়েছি। পাটের দাম ন্যূনতম পক্ষে কুইন্টাল পিছু ৬০০০-৬৫০০ টাকা হওয়া উচিত। আমরা চাই কেন্দ্রীয় সরকার পুজোর আগে পাটের দাম বৃদ্ধির ব্যবস্থা করুক।’’
সম্প্রতি বহরমপুরের সাংসদ ইউসুফ পাঠান সংসদে পাট চাষিদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে চাষিরা যাতে পাটের ন্যায্য দাম পান সে বিষয়টিও কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টিগোচর করেন। পরে একই দাবিতে ইউসুফ পাঠান কেন্দ্রীয় বস্ত্র ও বয়ন দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন।
রবিবার হরিহরপাড়ার কৃষক মিলন মণ্ডল বলেন, ‘‘পাটের দাম যা রয়েছে তা দিয়ে খরচ উঠবে না। ফলে পুজোর বাজার কী হবে তা এখনই বুঝতে পারছি না। আমরা চাই কেন্দ্রীয় সরকার পর্যাপ্ত পাটের দাম ব্যবস্থা করুক।’’ ডোমকলের খুচরো পাট ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘‘যে দাম রয়েছে সেই দামেই পাট কিনছি।’’