• বয়স বাড়তেই বেতনহীন পরিচারিকাকে তাড়াল মালিক! গৃহহীন বৃদ্ধাকে আশ্রয় ব্লক প্রশাসনের
    প্রতিদিন | ২৮ আগস্ট ২০২৪
  • অমিতলাল সিংদেও, মানবাজার: জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় যে বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে কাটালেন, শেষ সময়ে সেখান থেকেই তাড়িয়ে দেওয়া হল এক বৃদ্ধাকে। কারণ বয়সের ভারে তিনি আর পরিচারিকার কাজ করতে পারছিলেন না। অবশেষে প্রশাসনের উদ্যোগে নতুন ঠিকানা পেলেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা। বাড়ির মালিকের এমন নিষ্ঠুরতায় লজ্জিত এলাকাবাসীরাও।

    চল্লিশ বছর ধরে এক টানা ওই বাড়িতেই বিনা পারিশ্রমিকে সমস্ত কাজ সামলে ছিলেন। সেই বাড়ি থেকেই তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে স্রেফ বার্ধক্য কারণে। ফলে কখনও রাস্তায়, কখনও স্কুলে আশ্রয় নিয়ে থাকছিলেন পুরুলিয়ার বোরোর স্নেহলতা পরামানিক। এই ঘটনার খবর কানে আশায় ব্লক প্রশাসনের তরফে ওই বৃদ্ধাকে একটি বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়ির মালিকের এমন নিষ্ঠুরতায় লজ্জিত এলাকার মানুষজনও। পাশাপাশি ব্লক প্রশাসনের এমন মানবিক কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছেন মানবাজার ২ ব্লকের মানুষজন। ওই ব্লকের বিডিও শঙ্কু বিশ্বাস বলেন,” ওই মহিলার কেউ না থাকায় তাঁকে আদ্রার একটি বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

    স্থানীয় ও ব্লক প্রসাশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি স্নেহলতাদেবী মানবাজার ২ ব্লকের জারাগোড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই স্কুল কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসীরা তাঁর খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন তিনি ওই স্কুলে ঠাঁই নিয়েছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে হতবাক হয়ে যায় স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে ওই গ্রামের মানুষজন। গৃহহীন ওই বৃদ্ধা তখন জানান, তাঁর বাবা-মা মারা গিয়েছেন। গত চল্লিশ বছর ধরে মানবাজার ২ ব্লকের চন্দনপুর গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়িতে থেকে বিনা পারিশ্রমিকে পরিচারিকার কাজ শুরু করেন। বিনিময়ে সেখান থেকে মিলত শুধু থাকা এবং খাওয়া। মাঝে মধ্যে মিলত পরনের কাপড়। একটানা ৪০ বছর ওই বাড়িকে নিজের মতো করে নিয়েছিলেন। সমস্ত কাজ তিনি করতেন। কিন্তু বয়সের কারণে এখন আর তিনি সব কাজ করে উঠতে পারছিলেন না।

    শুধুমাত্র এই কারণে সপ্তাহখানেক আগে স্নেহলতাদেবীকে ওই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কোথায় যাবেন তিনি ভেবে পাননি। কারণ বাবা-মা , ভাই সবাই মারা গিয়েছেন। ভাইপোরাও আর্থিক ভাবে দুর্বল। ফলে কয়েকদিন তিনি এখানে ওখানে ঘুরে ফিরেই রাত কাটিয়েছেন। কিন্তু বর্ষার বৃষ্টির কারণে চার দিন আগে ওই স্কুলে ওঠেন। ওই মহিলার এমন করুণ অবস্থা জানার পরেই ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানবাজার ২ ব্লকে বিষয়টি জানান। তার পরেই মানবাজার ২ ব্লকের বিডিও সমগ্র বিষয়টি মানবাজার মহকুমাশাসককে জানান। খবর পেয়ে প্রশাসনের তরফে আদ্রার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বৃদ্ধাশ্রমে ওই মহিলাকে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মোতাবেক রবিবার ব্লক প্রশাসনের তরফে ওই বৃদ্ধাকে গাড়িতে চাপিয়ে আদ্রার ওই নতুন ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
  • Link to this news (প্রতিদিন)