এই সময়: ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ব্যানারে নবান্ন অভিযানে পুলিশি ‘আক্রমণে’র অভিযোগ তুলে আচমকাই আজ, বুধবার ১২ ঘণ্টার বাংলা বন্ধ ডাকল বিজেপি। মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির সামনে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার দিনেই বিজেপির বাংলা বন্ধের ডাক দেওয়ার পিছনে রাজ্যে অরাজকতা তৈরির ছক রয়েছে বলে আশঙ্কা করছে তৃণমূল।রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও বলা হয়েছে, পুজোর মুখে এই বন্ধ পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির ক্ষতি করবে। নবান্ন থেকে এ দিন ঘোষণা করা হয়েছে, বিজেপি বন্ধ ডাকলেও পুলিশ-প্রশাসন রাজ্যের জনজীবন স্বাভাবিক রাখার সমস্ত চেষ্টা করবে। রাজ্যের যুক্তি, অতীতে আদালত বন্ধ ডাকা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে রায় দিয়েছে। তাই বিজেপির এই বন্ধও বেআইনি।
শুধু রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ভাবেই এই বন্ধের মোকাবিলা করছে না রাজ্যের শাসক দল। এই বন্ধের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছে। আজই এই জনস্বার্থ মামলার শুনানি হওয়ার কথা। আইনজীবী অগ্নীশ বসুর দায়ের করা এই জনস্বার্থ মামলায় বিজেপিকে পার্টি করা হয়েছে।
যেহেতু আজই সকাল ছ’টা থেকে বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে, তাই অবিলম্বে মামলাটি তালিকাভুক্ত করে দ্রুত শুনানির জন্য এ দিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে। আদালত সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নোটিস পাঠিয়ে আজ সকাল ১০টায় মামলা ফাইলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আজকের সাপ্লিমেন্টারি লিস্টের এক নম্বর মামলা এটি শুনবেন বিচারপতিরা। মামলায় মূল আর্জি, কোনও রাজনৈতিক দলের ডাকা বেআইনি বন্ধের জন্য যেন কোনও ভাবেই সাধারণ জনজীবন ব্যাহত না-হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ব্যানারে কলকাতা ও হাওড়ার একাধিক জায়গা থেকে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযান চলাকালীন পুলিশ ‘আক্রমণ’ চালিয়েছে, এই অভিযোগ তুলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আজ সকাল ছ’টা থেকে সন্ধে ছ’টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার বন্ধের ডাক দেন।
এর আধ ঘণ্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘বুধবার বাংলাকে স্তব্ধ করার যে প্রয়াস করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অসমর্থনীয়। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা, পরীক্ষা চলছে। শারদোৎসবের বেচাকেনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জানাচ্ছে, বুধবারে প্রস্তাবিত বন্ধকে মেনে নেওয়া হবে না। সকলের কাছে অনুরোধ, এই বন্ধে অংশ নেবেন না।’
‘লাশের রাজনীতি’ই মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানের মূল লক্ষ্য বলে রাজ্যের শাসক দলের পক্ষ থেকে একাধিক বার অভিযোগ করা হয়েছিল। সোমবার তৃণমূল নেতৃত্ব এই অভিযোগও তোলেন, যে কোনও ভাবে প্ররোচনা তৈরি করে হতাহতের ঘটনা ঘটানোর ছক তৈরি করা হয়েছিল এই অভিযানকে ঘিরে। কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলে দেওয়ায় এই প্ল্যান বানচাল হয়ে গিয়েছে এবং সেই কারণেই বন্ধের ডাক দিয়ে নতুন উদ্যমে অরাজকতা তৈরির ছক কষা হচ্ছে বলে এ দিন অভিযোগ করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
তাঁর কথায়, ‘এদের লক্ষ্য ছিল একটা বডি! সেটা এ দিন হলো না। পুলিশ ওদের প্ররোচনায় পা দেয়নি। তাই অরাজকতার ছক কষতে বিজেপির পক্ষ থেকে ১২ ঘণ্টার বনধ ডাকা হয়েছে।’
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে কিছু দিন আগে এসইউসিআই (সি) বন্ধের ডাক দিয়েছিল। বঙ্গ বিজেপি একদা বন্ধ-রাজনীতির বিরোধিতা করেছে, তৃণমূল জমানায় গত ১৩ বছরে বিজেপি কোনও সার্বিক বাংলা বন্ধের ডাক দেয়নি। ২০০৯ সালে শেষবার বিজেপি বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছিল। এরমধ্যে অবশ্য ২০২০ সালে বিজেপির তরফ থেকে একবার উত্তরবঙ্গ বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছিল।
তাহলে যে নবান্ন অভিযান সরাসরি বিজেপির তরফে আহ্বান করা হয়নি, তাকে ঘিরে আচমকা সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বাধীন গেরুয়া ব্রিগেড কেন বাংলা বন্ধের ডাক দিল?
সুকান্তর ব্যাখ্যা, ‘কেন পুলিশ শান্তিপূর্ণ নিরস্ত্র মিছিলের উপরে লাঠিচার্জ করল? কেন কাঁদানে গ্যাস চার্জ করা হলো? বয়স্ক মানুষ, মহিলারা পর্যন্ত ছাড় পাননি। জল কামান থেকে কেমিক্যাল মেশানো জল স্প্রে করা হয়েছে। ছাত্রদের উপরে এই বর্বর আক্রণের প্রতিবাদে ১২ ঘণ্টার সাধারণ বন্ধ সফল করুন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী দেওয়াল লিখন পড়তে পারছে না। এটা বাংলার সাধারণ মানুষের আন্দোলন।’