• ফেলে দেওয়া সামগ্রী দিয়ে পোশাক-প্যাকেজিং, নজর কাড়লেন বিশ্বভারতীর ৫ ছাত্রী
    বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: জৈব ও ফেলে দেওয়া উপাদান দিয়ে চমৎকার পোশাক ও প্যাকেজিংয়ের জিনিসপত্র তৈরি করে তাক লাগালেন বিশ্বভারতীর পাঁচ ছাত্রী। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প সদনের টেক্সটাইল বিভাগের স্নাতকস্তরের পড়ুয়া। এবারেই ছিল তাঁদের ফাইনাল সাবমিশন। তবে তাঁদের প্রজেক্ট দেখে বিস্মিত হয়েছেন খোদ অধ্যাপকরা। এমনকী, তাঁদের মধ্যে কিছুজনের তৈরি জিনিসপত্র পেটেন্ট পায় কি না, সেজন্য সংশ্লিষ্ট ভবন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

    সৌমিলি পাল, কোমল সাউ, প্রিয়া কুমারী, সাঙ্গেয়া ঘোষাল ও সুজাতা রুজ হলেন সেই পাঁচ পড়ুয়া। তাঁরা প্রত্যেকেই ব্যাচেলর ইন ডিজাইন নিয়ে টেক্সটাইল বিভাগ থেকে এবছর স্নাতক উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাঁদের গাইড ছিলেন অধ্যাপক শঙ্কর রায়মৌলিক। মূলত অন্তিম সেমেস্টারে তাঁরা এই বিষয়গুলি তুলে ধরেন। তাঁদের মধ্যে সৌমিলি, কোমল ও প্রিয়া জৈব এবং নষ্ট হয়ে যাওয়া উপাদান থেকে জিনিসপত্র তৈরি করে নজর কেড়েছেন। সেগুলি পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি দেখতেও সুন্দর, টেকসই বলে দাবি তাঁদের। সৌমিলির প্রজেক্ট কচুরিপানা নিয়ে। এটি এমনই জলজ উদ্ভিদ, যা একবার পুকুরে জন্মালে আর রক্ষে নেই। কিছুদিনের মধ্যেই তা ভরাট হয়ে যায়। সেই কচুরিপানার তন্তু থেকে সুতো বের করে জামাকাপড়, হ্যান্ড মেড পেপার, প্যাকেজিংয়ের জন্য বিভিন্ন ব্যাগ তৈরি করেছেন সৌমিলি। যা প্লাস্টিকের পরিবর্ত হিসেবে সহজেই ব্যবহার করা যাবে। এমনকী, ব্যবহারের পর ফেলে দিলে তা পরিবেশের সঙ্গে সহজেই মিশে যাবে। তাঁর মতো কোমলের প্রজেক্টও প্রায় একই রকম। তবে কচুরিপানার পরিবর্তে তিনি ব্যবহার করেছেন পাট। বলা ভালো পাটের ফেলে দেওয়ার তন্তুকে কাজে লাগিয়ে তিনি তৈরি করেছেন হ্যান্ডমেড পেপার। যা প্যাকেজিং করার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

    ব্যাগ, জ্যাকেট তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় চামড়ার। তারজন্য হাজার হাজার প্রাণীর হত্যা হয়। এই চর্ম শিল্পের জন্য যেমন পরিবেশ দূষণ হয়, তেমনই প্রচুর জল খরচও হয়। এই বিষয়টি প্রিয়া কুমারীকে ভাবিয়ে তোলে। তাই চামড়ার বিকল্প কীভাবে তৈরি করা যায়, সেটি তার প্রজেক্টে তিনি তুলে ধরেছেন। এরজন্য তিনি কলাগাছের কাণ্ড, আখের ছিবড়ার মতো জৈব অথচ ফেলে দেওয়া উপাদান ব্যবহার করেছেন। তা থেকেই তৈরি করেছেন বিভিন্ন ডিজাইনের রকমারি ব্যাগ। যা দেখলেও ধরার উপায় নেই যে, এগুলো জৈব উপাদান দিয়ে তৈরি। 

    বস্ত্রশিল্পে বাটিক খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু এই বাটিক তৈরি করার জন্য অপরিহার্য রং ন্যাপথল। এটি রাসায়নিক, আবার পরিবেশ বান্ধবও নয়। তাই এক্ষেত্রে অন্য উপাদান ব্যবহার করে চমক দিয়েছেন একই বিভাগের সাঙ্গেয়া ঘোষাল।‌ তিনি ইকো কনসাস বা পরিবেশবান্ধব উপাদান তথা রিঅ্যক্টিভ রং বাটিকে ব্যবহার করেছেন। এতে জামাকাপড়ের রং যেমন দীর্ঘদিন থাকবে, তেমনই ত্বকের কোনও সমস্যা হবে না বলে দাবি ওই ছাত্রীর। 

    জামা কাপড়ে সুগন্ধি বা বডি স্প্রে অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু তা যদি কাপড়ের মধ্যেই থাকে, তাহলে যেন সোনায় সোহাগা। এটিই ছিল সুজাতার প্রজেক্টের বিষয়। যার নাম মাইক্রো এনক্যাপসুলেশন। এই প্রক্রিয়ায় তৈরি জামা কাপড়ে প্রাকৃতিক গন্ধের উপাদান রয়েছে। একবার, দু’বার নয়, দশ বার কাচলেও গন্ধ একই রকম থাকে। আবার কেউ যদি সেই কাপড় ৩০ দিন পর্যন্ত রাখে, গন্ধও অপরিবর্তিত থাকবে। তাঁর এই চমকপ্রদ কাজগুলি শিল্প সদনের ছাত্র-ছাত্রীসহ অধ্যাপকদেরও নজর কেড়েছে। 

    এপ্রসঙ্গে তাঁদের গাইড শঙ্কর রায়মৌলিক বলেন, এবছর তাঁরা উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু তাঁরা যে কাজ করে গেলেন, তা অত্যন্ত যুগোপযোগী। আগামীদিনে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক হয়ে থাকল।
  • Link to this news (বর্তমান)