• পোষ্যদের চাকরি দেয়নি ইসিএল জামুড়িয়া ও অণ্ডালে ধর্না, বিক্ষোভ
    বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: কর্মরত খনি শ্রমিকের মৃত্যুতে পোষ্যদের চাকরি দিচ্ছে না ইসিএল। কোথাও বঞ্চিত মৃতের স্ত্রী। কোথাও  আবার চাকরি পাচ্ছেন না মৃতের ছেলে, মেয়েরা। এই অভিযোগ তুলে সোমবার মঙ্গলবার ইসিএলের চারটি কোলিয়ারিতে চানকের সামনে ধর্নায় বসে পড়ে বঞ্চিত পরিবারের সদস্যরা। বন্ধ হয়ে যায় খনির কাজ। বছরের পর বছর তাঁরা অবহেলিত। অথচ, টনক নড়েনি কেন্দ্রীয় সরকারের অধিনস্ত এই সংস্থার কর্তাদের। ধর্না আন্দোলনে কয়েকঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতেই ঘুম ছুটে যায় ইসিএলের পদস্থ আধিকারিকদের। তড়িঘড়ি চাকরি দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তার পর আন্দোলন তুলে নেন পরিবারের লোকজন। আ঩ন্দোলনের জেরে চার ঘণ্টা করে কাজ আটকে গিয়েছিল কোলিয়ারিগুলির। সবক্ষেত্রেই আন্দোলনকারীদের পাশে ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন কয়লা খাদান শ্রমিক কংগ্রেসের (কেকেএসসি) নেতৃত্ব।

    কেকেএসসির সাধারণ সম্পাদক তথা জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং বলেন, ইসিএলের মৃতের পরিবারকে চাকরি দিতে টালবাহানা করছে। কেউ দশ বছর ধরে কোলিয়ারির দরজায় দরজায় ঘুরছেন। কেউ ১১ বছর ধরে। তাঁরা বাধ্য হয়ে ধৈর্য্য হারিয়ে এদিন আন্দোলনে বসেছিলেন। আমরা তাঁদের সমর্থন করেছি। আন্দোলন চলার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তাঁরা আমাকে প্রতিশ্রুতি দেয়, এদিনই নিয়োগপত্র তৈরি হয়ে যাবে। তাই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ওঁরা।  মঙ্গলবার সকালেই কাজোড়া এরিয়ার অণ্ডাল থানার পড়াশকোল কোলিয়ারির চানক আটকে ধর্নায় বসে পড়েন এক মহিলা। যার জেরে কোলিয়ারির কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। জানা গিয়েছে, তিনি বোধনী মেঝান। স্বামী লক্ষ্মীরাম মাঝি কোলিয়ারিতে কাজ করতেন। ২০১৪ সালে তিনি মারা গিয়েছেন। সেই সময় থেকেই তাঁর স্বামীর চাকরি স্ত্রী পাওয়ার জন্য‌ প্রক্রিয়া শুরু হয়। দশ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও অসহায় বৃদ্ধাকে চাকরি দিতে পারেনি ইসিএল। তিনি লোকের বাড়িতে বাসন মেজে দিনগুজরান করেন। তিনি বলেন, আমি এভাবে আর সংসার চালাতে পারছি না। যতক্ষণ না ইসিএল আমাকে চাকরি দেবে, আমি চানকেই বসে থাকব। 

    অন্যদিকে একই ভাবে জামুড়িয়া থানার কুনুস্তোড়িয়া কোলিয়ারির ১ নম্বর পিটে চানকে ধর্নায় বসে পড়েন যুবতী সঙ্গীতা মুখোপাধ্যায়। কোলিয়ারির নেতারা জানান, ২০২১ সালে তাঁর বাবা উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় মারা যান। ইসিএল তাঁর বিবাহ বিচ্ছিন্না মেয়ে সঙ্গীতাকে কাজ দিতে অস্বীকার করে। পরিবার হাইকোর্টে মামলা করলে চাকরি দেওয়ার নির্দেশ জারি হয়। তারপরও এখনও চাকরি পাননি সঙ্গীতা। তিনি বলেন, হাইকোর্ট চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। শুধুমাত্র একটি সইয়ের জন্য আমার চাকরি আটকে রয়েছে। আর অপেক্ষা করতে পারছি না। 

    পাণ্ডবেশ্বর কোলিয়ারিতে পরিবার নিয়ে ধর্নায় বসে পড়েন শঙ্কর ভুইয়া। তাঁর অভিযোগ, ২০১৩ সালে বাবা এথোয়াড়ি ভুঁইয়া মারা গিয়েছে। বাবা ইসিএল কর্মী থাকায় তাঁর চাকরি আমাকে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এতদিনেও চাকরি পেলাম না। তাই আমরা এই আন্দোলনে নেমেছি। একই ভাবে শ্যামসুন্দরপুর কোলিয়ারির ভেতরেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় ব্রজগোপাল অধিকারীর। তখনই তাঁর ছেলে সৌরভ অধিকারীকে অস্থায়ীভাবে কাজের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় দ্রুত স্থায়ী নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। অভিযোগ, এক বছর পরও স্থায়ী নিয়োগপত্র পাননি তিনি। তিনি এখন বেতনও পাচ্ছেন না। সৌরভ এদিন ধর্নায় বসে পড়েন। ইসিএলের ডিরেক্টর (পার্সোনাল) আহুতি সোয়াইন ও জনসংযোগ আধিকারিক পিনাকী চট্টোরাজকে ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি।
  • Link to this news (বর্তমান)