• মাথাভাঙা, চূর্ণি নদীতে চীনা জাল দিয়ে চলছে মাছ ধরা, উদ্বিগ্ন পরিবেশকর্মীরা
    বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টিতে জল বাড়ছে নদীতে। ফুঁসছে মাথাভাঙা, চূর্ণী। এই অবস্থায় নদী পাড়ে বসবাসকারী মৎস্যজীবীরা চীনা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। উদ্বিগ্ন প্রশাসন থেকে শুরু করে নদী বাঁচাও আন্দোলনে জড়িত কর্মীরা। ইতিমধ্যেই এই অবৈধ উপায়ে মাছ ধরা বন্ধ সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে প্রশাসনও প্রস্তুতি নিচ্ছে। একটা সময় চূর্ণী নদীতে চলাচল করত বড় বড় নৌকা। চলত লঞ্চও। নদী তীরবর্তী হাজার হাজার মৎস্যজীবী মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বর্তমানে দূষণের কারণে সেসব আজ অতীত। নদীতে পলি জমে চূর্ণী হারিয়েছে তার নাব্যতা। নদীর কোথাও অবর্জনা জমে গতিপথ হয়েছে নর্দমা। ক’দিন আগে চূর্ণি ঢাকা পড়েছিল কচুরিপানায়। এদিকে, একমাত্র বর্ষার সময় জল থাকে মাথাভাঙায়। অন্য সময় জল থাকে না। থাকলেও কোথাও কোথাও হাঁটু সমান। পলি জমে জমে মাথাভাঙার অস্তিত্বও ঘোর সঙ্কটের মুখে। 

    গেদে থেকে শুরু হয়ে মাঝদিয়াতে এসে মিশেছে মাথাভাঙা। প্রায় ১৯ কিমি পেরিয়ে মাজদিয়া বা ওপারের পাবাখালিতে এসে দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটা চূর্ণী। অন্যটি ইচ্ছামতী। মাথাভাঙা ও চূর্ণী নদীর দু’পাড়ে গোবিন্দপুর থেকে পায়রাডাঙা শিবপুর পর্যন্ত প্রায় ১২০ টি গ্রাম রয়েছে। মাথাভাঙাতে আজ দূষণের ফলে চিতল, বোয়াল, কালবাউশ, মৃগেল, পুঁটি, ফলুই, খয়রার মতো দেশি মাছ আর মেলে না।

    দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের চিনিকল থেকে বর্জ্য এসে মিশছে মাথাভাঙার জলে। সেখান থেকে আসছে চূর্ণীতে। মারা যাচ্ছে নদীর মাছ। নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।  নদী তীরবর্তী  হাজার হাজার মৎস্যজীবীর জীবন-জীবিকা এখন বিপন্ন হয়ে ওঠেছে। দূষণের জেরে নদীতে স্নান করাও বিপজ্জনক। নানা রকমের চর্ম রোগ হয়। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েও কিছু হয়নি। এই মুহূর্তে নদীর জল বেড়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার নদীয়ায় গড় বৃষ্টি হয়েছে ৪৪.৫ মিলিমিটার। ভাজনঘাটে ৭৪ মিলিমিটার ও কৃষ্ণগঞ্জে ৪৪মিলি মিটার বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার বৃষ্টি হয়েছে ভাজনঘাটে ৯ মিলিমিটার ও কৃষ্ণগঞ্জে ১৬ মিলিমিটার। বর্ষা মরসুম ও নিম্নচাপের টানা বৃষ্টিতে নদীতে জল বেড়ে যাওয়ায় কচুরিপানা আর নদীবক্ষে দাঁড়িয়ে নেই। কচুরিপানা গঙ্গার অভিমুখে। এই অবস্থায় মাথাভাঙা, চূর্ণি  নদীতে মিহি অবৈধ চীনা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন মৎস্যজীবীরা। এই সময় মাছেদের বংশবৃদ্ধির সময়। তাই এই জালের মাধ্যমে উঠে আসছে মীন, মাছের ডিম থেকে মাছের চারাপোনা। যা আগামীদিনে মৎস্যকূলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পক্ষে সমস্যা হবে। এ প্রসঙ্গে নদী নিয়ে কাজ করা স্বপন ভৌমিক বলেন, মাথাভাঙা, চূর্ণি  নদীতে স্থানীয়রা  চীনা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। এতে নদীর মাছ আরও সঙ্কটে পড়ছে। এভাবে কেউ যাতে চীনা জাল দিয়ে মাছ না ধরেন তার জন্য আমরা প্রচার শুরু করেছি। সামনের মাস থেকে সেই প্রচার আরও জোরদার করা হবে। এ প্রসঙ্গে বিডিও সৌগত কুমার সাহা বলেন, আমরা এই অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের অফিসারদের সঙ্গে এ নিয়ে মিটিংয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)