• জাহাজডুবির ঘটনায় হদিশ মেলেনি তিন নাবিকের, সমুদ্রে তল্লাশি জারি
    বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৪
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া এমভি আইটিটি পুমা জাহাজের ক্যাপ্টেন সহ নিখোঁজ তিনের মঙ্গলবার সন্ধে পর্যন্ত কোনও হদিশ মেলেনি। নিখোঁজ তিনজন হলেন ক্যাপ্টেন, জাহাজের চিফ অফিসার এবং একজন অয়েলার নাবিক। নিখোঁজ চিফ অফিসার তপন মালের বাড়ি হলদিয়ার বাড়বাসুদেবপুর গ্রামে। মাঝসমুদ্রে নিখোঁজ তপনবাবুর জন্য উদ্বিগ্ন পরিবারের লোকজন এবং প্রতিবেশীরা। সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ হলদিয়া কোস্টগার্ড থেকে জাহাজডুবির খবর পান তপনবাবুর পরিবার। তারপর থেকে দু’দিন কেটে গেলেও কোস্টগার্ড থেকে কোনও খবর না মেলায় পরিবারের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। এদিকে, মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ জাহাজের উদ্ধার হওয়া ১১ জন নাবিককে নিয়ে পারাদ্বীপ পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে কোস্টগার্ড কর্তৃপক্ষ। ওই নাবিকরা সকলেই সুস্থ রয়েছেন। কোস্টগার্ডের সারাঙ এবং অমোঘ নামে দু›টি জাহাজ ওই নাবিকদের উদ্ধার করে এনেছে। ওই জাহাজেই মেডিকেল টিম নাবিকদের চিকিৎসা করেছে। কলকাতা থেকে আন্দামান যাওয়ার পথে রবিবার সাগরের কাছে ডুবতে শুরু করে এমভি আইটিটি পুমা নামে খাদ্যসামগ্রী বোঝাই একটি ভারতীয় জাহাজ। 

    সাগরদ্বীপ থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে। ওইদিন বিকেল ৪টে ২৫ মিনিট নাগাদ খবর পেয়ে উদ্ধার কাজে যায় কোস্টগার্ডের দু’টি জাহাজ ও রাতে অভিযান চালাতে দক্ষ একটি ডর্নিয়ার প্লেন। তারা জাহাজের ১৪ জন নাবিকের মধ্যে ১১ জনকে উদ্ধার করে। কোস্টগার্ডের মুখপাত্র অভিনন্দন মিত্র প্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া ১১ জনের চিকিৎসা ও শুশ্রূষা চলছে। বাকি নিখোঁজ তিন জনের মঙ্গলবার দিনভর সমুদ্রে অপারেশন চালিয়েছে জাহাজ, ডর্নিয়ার প্লেন। এমভি আইটিটি লায়ন নামে সংস্থার একটি জাহাজও সমুদ্রে তল্লাশি চালাচ্ছে। জাহাজ কোম্পানির মালিক পারভেজ রহমান এদিন বলেন, নিখোঁজদের জন্য আমরা সবাই খুবই উদ্বিগ্ন। দু’জনের দেহ মিলেছে বলে একটি গুজব রটে গিয়েছিল কিন্তু তা সত্যি নয়। পরিবারের লোকজনকে সান্ত্বনা দিচ্ছি। উদ্ধার হওয়া নাবিকদের কলকাতা ফেরানোর জন্য সংস্থার লোকজন পারাদ্বীপ গিয়েছেন। এদিকে, হলদিয়ার নিখোঁজ জাহাজের অফিসার তপন মালের বাড়ির লোকজনও পারাদীপে কোস্টগার্ডের অফিসে পৌঁছে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। 

    এদিন সকাল থেকেই বালুঘাটা-চৈতন্যপুর রোডের সাহুবাজার সংলগ্ন মাল পাড়ায় নিখোঁজ তপনবাবুর বাড়িতে প্রতিবেশীদের ভিড়। উদ্বিগ্ন আত্মীয় স্বজন সবাই খোঁজ নিতে এসেছেন। স্ত্রী শ্যামলী মাল কথা বলার অবস্থায় নেই। দুই মেয়ে সৌমিলি ও সোহিনীর মুখ থমথমে। সৌমিলি ইংরেজি অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আর সোহিনী দ্বাদশের ছাত্রী। বার বার তপনের বন্ধুবান্ধবদের ফোন আসছে পরিবারের লোকজনের কাছে। তপনের শ্বশুরমশাই আইওসির অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রামপদ মাইতি বলেন, জামাইয়ের ঠিকমতো খবর পাচ্ছি না কোস্টগার্ড থেকে। আমরা সবাই দিশেহারা। উদ্ধার হওয়া নাবিকদের সূত্রে জেনেছি, ক্যাপ্টেন ও তপন লাইফ জ্যাকেট পরে রেডি ছিল, কিন্তু উদ্ধারকারী বোটে উঠতে পেরেছিলেন কি না, দেখতে পাইনি অন্ধকারে। আন্দামান যাওয়ার আগে একদিনের ছুটিতে বৃহস্পতিবার বাড়ি এসেছিলেন তপন। তারপর দিন ভোরেই বেরিয়ে যান কলকাতায়। শনিবার জাহাজ নিয়ে রওনা দেন আন্দামানের উদ্দেশে। খবর পেয়েই বাড়িতে ছুটে যান স্কুলবেলার বন্ধু কমল জানা। কমল বলেন, ক্লাস টুয়েলভের পর তপন কলকাতায় চলে যায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। তারপর রেডিও অফিসার থেকে এখন জাহাজের বড় পদে ছিল। ও নিখোঁজ রয়েছে শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। তপন কবে ফিরবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছি সবাই।
  • Link to this news (বর্তমান)