• অ্যাম্বুলেন্স পেতে কালঘাম, হাসপাতালে পৌঁছেও নেই ডাক্তার 
    বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি অব্যাহত। ১৮ দিন পরও অবস্থানে অনড় তাঁরা। সর্বোচ্চ আদালত থেকে রাজ্য সরকার—শত আবেদন নিবেদনেও চিকিৎসকদের একাংশ কাজে না ফেরায় রোগী দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। তার মধ্যে মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের নামে শহরের বিভিন্ন অংশে কার্যত তাণ্ডব চলায় রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের চূড়ান্ত ভোগান্তি পোহাতে হয়। 

    পিটিএসের সামনে ততক্ষণে ‘ছাত্রবেশী’ জনতার ভিড় ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিস। গাড়ি চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। রাস্তার এক ধার দিয়ে পিটিএসের দিকে হেঁটে আসছিলেন এক যুবক। তাঁর এক হাতে প্রেসক্রিপশন ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রের ব্যাগ। অন্য হাতে ধরে রেখেছেন এক মহিলাকে। তাঁর চোখে কালো চশমা। যুবক জানালেন, স্ত্রীর চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে আগেই। এদিন চেক-আপে এসেছিলেন। কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরছেন। কারণ, ডাক্তারবাবু নেই। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে হেঁটেই ফিরছেন কারণ, নবান্ন অভিযান ও তা ঠেকাতে পুলিসের বিস্তর আয়োজনের ঠেলায় গণপরিবহণ তখনও স্বাভাবিক হয়নি। কথা বলতে গিয়ে জানা গেল, তিনি মহেশতলার বাসিন্দা শামিম লস্কর। বাড়ি থেকে অটোতে কিছুটা আসার পর বাস ধরে হাসপাতালে আসেন। এদিন বাস পাননি। অগত্যা ২০০ টাকা ট্যাক্সিভাড়া দিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন তাঁরা। এত কসরতের পরও ডাক্তার না দেখিয়েই ফিরতে হচ্ছে তাঁদের। তাঁর স্ত্রী মুফিসা বিবি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘এখনই এসব আন্দোলন বন্ধ করা দরকার। হাসপাতালে তো কোনও কাজই হচ্ছে না। আজ ডেট ছিল বলে এত কষ্ট করে এলাম। কোনও লাভ হল না।’ 

    এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুই যুবক। তাঁদের মধ্যে একজন মইনুদ্দিন মল্লিক। ক্যান্সার আক্রান্ত খুড়তুতো ভাইকে নিয়ে তিনি সাঁতরাগাছি থেকে এসেছিলেন। তাঁরও একই অবস্থা। হাসপাতাল থেকে বলে দিয়েছে ‘ডাক্তার নেই। কাল ওপিডিতে আসুন।’ অথচ, এদিন হাসপাতালে আসতে গিয়ে কী সমস্যাতেই না পড়তে হয়েছে তাঁদের! মইনুদ্দিন বলছিলেন, ‘আমাদের হাওড়ায় তো চারদিকের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে সকাল থেকে। গাড়ি, অ্যাপ ক্যাব, অ্যাম্বুলেন্স কিচ্ছু পাচ্ছিলাম না। শেষে একটা অ্যাম্বুলেন্স পেলাম প্রায় দ্বিগুণ টাকা দিয়ে। এতসবের পর এখন হাসপাতালে বলছে, কাল আসুন!’ তাঁর প্রশ্ন, ‘ইমার্জেন্সি বলেই তো এখানে নিয়ে এসেছি। ভাইয়ের পেটে একটা নল ঢোকানো রয়েছে। এতটাই সমস্যা হচ্ছে যে এখনই কোনও ব্যবস্থা না নিলে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়বে।’  তাহলে এখন কী করবেন? ‘দেখি, কী করা যায়। ঠাকুরপুকুর নিয়ে যাওয়া যায় কি না, যোগাযোগ করছি’—দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। 

    মঙ্গলবার বহু রোগী ও তাঁদের পরিজনরা এভাবেই কার্যত সাঁড়াশি চাপে পড়েন। একে ডাক্তারদের কর্মবিরতি, তার উপর নবান্ন অভিযানের নামে জায়গায় জায়গায় অশান্তি। আর সেই সুযোগে কোথাও ১৪০০ টাকার জায়গায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়েছে ২৪০০ টাকা। কেউ আবার পরপর দু’-তিনদিন হাসপাতালে এসেও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, কারণ ডাক্তারবাবুরা কর্মবিরতিতে ব্যস্ত!
  • Link to this news (বর্তমান)