• প্রত্যাশিত অশান্তি, ‘শান্তিপূর্ণ’ নবান্ন অভিযানের নামে ভাঙচুর, আগুন
    বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: তথাকথিত ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর নবান্ন অভিযানের আড়ালে দুষ্কৃতীরা যে বড়সড় গোলামাল পাকাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, এ আশঙ্কা আগেই করেছিল পুলিস-প্রশাসন। সেই ‘প্রত্যাশিত পথে’ই মঙ্গলবার অভিযান চালাল ‘ছাত্র ভেকধারী’ গেরুয়া শিবির। সাংবাদিক সম্মেলন করে ছাত্র সমাজের স্বঘোষিত নেতারা জানিয়েছিলেন, গোটা কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। কুড়িয়ে-কাচিয়ে কয়েকজনকে হাতে জাতীয় পতাকা ধরিয়ে হাওড়া ব্রিজ, ফোরশোর রোড, সাঁতরাগাছি ও হেস্টিংস মোড় টপকে নবান্নে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যদিও অভিযানের শুরুতেই তারা ‘নখদন্ত’ বের করে ফেলে। বারমুডা, পাজামা, লালবস্ত্রধারী পক্ককেশ, এমনকী লুঙ্গি পরিহত অবস্থায় যে ‘ছাত্রদের’ দেখা গিয়েছে, তারা বিনা প্ররোচনাতেই আক্রমণ করেছে পুলিসকে। ব্যারিকেড উপড়ে, ইট-পাথর, লাঠি হাতে আক্রমণ চালিয়ে উর্দিধারীদের রক্ত ঝরানো, পুলিস কিয়স্ক ভাঙচুর, বাইকে আগুন, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করার মধ্যে দিয়ে ‘প্ররোচনা’ তৈরি করা হলেও, হাওড়া পুলিস কমিশনারেট এবং কলকাতা পুলিস ‘সংযমে’র পরিচয় দিয়েছে। লাশ কিংবা বডি ফেলে অরাজকতা সৃষ্টির ছক রূপায়ণের এই অভিযানে গুলি না চালিয়ে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, আর জল কামান দিয়েই ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে বিশৃঙ্খলাকারীদের। পুলিসের এই সংযমী ভূমিকায় অভিনন্দন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

    নবান্নে অভিযানের আড়ালে বড়সড় হাঙ্গামা পাকানোর পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের চ্যাট আদান প্রদান, ভয়েস কলে মেসেজ সরবরাহকারীর নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। সেই তথ্যেরই ভিত্তিতে সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। এর মধ্যে হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে চারজনকে। তারা বোমা, গুলি চালিয়ে লাশ ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল বলে পুলিস জানিয়েছে। এদিন বিকেলে নবান্নে এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার এবং এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) মনোজ ভার্মা বলেন, কর্মব্যস্ত দিনে জনজীবনকে স্তব্ধ করা এবং হাঙ্গামার অভিযোগে হাওড়া কমিশনারেট এলাকায় ৯৪ জন এবং কলকাতা পুলিস এলাকায় ১২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কলকাতায় ধৃতদের মধ্যে রয়েছে ২৩ জন মহিলা। ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ‘ছাত্র সাজা’ লোকজনের আক্রমণে হাওড়া কমিশনারেট এলাকায় একজন আইসি সহ ১১ জন এবং কলকাতা পুলিস এলাকায় ২৫ জন পুলিস কর্মী জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। যদিও যেভাবে ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলন করা হয়েছে, তাতে তাণ্ডবও অত্যন্ত নরম শব্দ বলে মনে করেন দুই পুলিস কর্তা। অপরদিকে বিজেপির দাবি, পুলিসের মার জখম হয়েছেন ১৩২ জন আন্দোলনকারী। দিনভর সক্রিয় না থাকলেও বিকেলে আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবিতে তৎপর হয়ে ওঠেন রা‌জ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা। লালবাজার অভিযানের ডাক দেওয়া হয়। অভিযানের নামে সেখানেও চলে একপ্রস্থ বিশৃঙ্খলা। গার্ড রেল উপড়ে লালবাজারে ঢোকার জন্য পুলিসকে আক্রমণ করা হয়। প্রথমে লাঠিচার্জ ও পরে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে কলকাতা পুলিস। এদিন হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অরাজকতা সৃষ্টির পর্বে এম জি রোড ক্রসিং থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত ব্যাপক তল্লাশি চালায় পুলিস। ছাত্র ভেকধারীদের ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে সেখান থেকে পেট্রল বোমা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিসের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়।
  • Link to this news (বর্তমান)