• ছাত্র সেজে কারা বিক্ষোভে? খোঁজ নিচ্ছে লালবাজার, মুখ ঢেকে দেদার ইটবৃষ্টি, ভাঙচুর
    বর্তমান | ২৮ আগস্ট ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কপালে লম্বা গেরুয়া টিকা। পরণে সাদা জামা। পাকাপাকা দাড়ি। মাথায় টাক। নাম সতীশ সিং। বয়স প্রায় ছাপ্পান্ন-সাতান্ন। ‘ছাত্রসমাজে’র ডাকে নবান্নে অভিযানে হেস্টিংস মোড়ে এমনই এক প্রৌঢ়ের নেতৃত্বে স্লোগান শুরু হল। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, উই ডিমান্ড জাস্টিস’ ধ্বনিতে গরম হচ্ছে এলাকা। সঙ্গে সঙ্গে হেলমেট মাথায় হাতে ফাইবারের লাঠি ও ঢাল নিয়ে প্রস্তুত পুলিস। 

    গেরুয়া টিকায় ‘সজ্জিত’ ওই প্রৌঢ়ের সঙ্গে তখন জনা দশেক লোক। তিন-চার জন মহিলাও রয়েছেন। কিন্তু, কাউকে দেখেই ছাত্রসমাজ ভাবার কোনও অবকাশ নেই। ‘আপনারা কারা? আজ তো ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। আপনারা কি ছাত্র?’ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে খানিকটা অপ্রস্তুত সতীশ। ওদিকে পুলিসের সাজগোজ দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তিনি দাবি করলেন— ‘আমরা সাধারণ মানুষ। পুলিস সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই আমরা আন্দোলন করছি।’ 

    শুধু হেস্টিংস মোড় নয়, শহরের বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেল ছাত্রের ছদ্মবেশে অশান্তি পাকাতে হাজির আন্দোলনকারীরা। এরই মধ্যে আরও একটি উদাহরণ হলেন কমল খামারু। ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা এই প্রৌঢ়। তাঁর হাতে এলোমেলো বাংলায় লেখা পোস্টার। তাঁর বক্তব্য, ‘আমিও সাধারণ মানুষ।’ 

    কলকাতায় যখন ছাত্র সেজে অভিযানে ভুয়ো লোকজন ঢুকল, হাওড়ায় তখন রীতিমতো দেদার সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর চালাল দুষ্কৃতীরা। আন্দোলনের নামে কার্যত হামলা চালাল তারা। সেই ছবি স্পষ্ট ধরা পড়ল ক্যামেরায়। মুখ তাদের কাপড় দিয়ে ঢাকা। শুধুমাত্র চোখ খোলা। রোগা চেহারায় বাঁশ হাতে নিয়ে গোটা বাসস্টপ ভাঙল তারা। হাওড়া ময়দান চত্বরে এমন দৃশ্যই দেখা গেল। অন্যদিকে, খিদিরপুরে মুখ বেঁধে পুলিসকে লক্ষ্য করে চলল ঝাঁক ঝাঁক ইটবৃষ্টি। হেস্টিংসের বিজেপির পার্টি অফিসের আশপাশেই থাকে তারা। পুলিসের তাড়া খেয়ে সেদিকেই যে যার বাড়ির দিকে দৌড় মারল। সেই সমস্ত ছবি ধরা পড়েছে পুলিসের ক্যামেরাতেও। 

    মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতা পুলিসের একটি ফেসবুক পোস্ট করা হয়। হেস্টিংস মোড় ও প্রিন্সেপ ঘাট এলাকায় পুলিসের উপর হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। লালবাজারের দাবি, তাদের দেখে স্পষ্ট যে, তারা কেউ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে আসেনি। তাহলে পুলিসের উপর নির্দ্বিধায় হামলা চালানো হতো না। লালবাজারের দাবি, এদেরকে পুলিস তাড়া করলে পালিয়ে যায়। তবে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের সন্ধান চাই। দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার করা হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণের উদ্দেশে পুলিস দুষ্কৃতীদের ছবি শেয়ার করে লিখেছে— ‘যাদের চেহারা চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের সন্ধান জানা থাকলে আমাদের জানান। সরাসরি বা আপনার স্থানীয় থানার মাধ্যমে পুলিসকে জানাতে পারেন।’
  • Link to this news (বর্তমান)