নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতোই মঙ্গলবার বড়বাজার এলাকায় খুলতে শুরু করেছিল দোকানপাট। ব্যবসার আশায় দোকানিরা পসরা সাজাতে শুরু করেছিলেন। কোথাও কেনাকাটাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু বেলা দশটার পর থেকে বড়বাজারের চেহারা গেল আমূল বদলে। তারপর বেলা যত বাড়ল, এলাকা চেহারা নিল বন্ধের। নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে অশান্তির আতঙ্কে এবং খরিদ্দার না থাকায় বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলেন বিক্রেতারা। ব্যবসায়ী মহলের হিসেব, পুজোর মুখে বিক্রি বন্ধ থাকায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেচাকেনার ক্ষতি হল শুধু বড়বাজার এলাকাতেই। বুধবার রিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধ। ফলে ফের আরও একশো কোটি ক্ষতির আশঙ্কা।
বড়বাজারে ক্রেতারা আসেন মূলত হাওড়া এবং শিয়ালদহ হয়ে। এদিন নবান্ন অভিযানের মিছিল আটকাতে বন্ধ করা হয়েছিল হাওড়া ব্রিজ। অন্যদিকে কলেজ স্কোয়ার থেকে আসা মিছিলের কারণে অবরুদ্ধ ছিল এম জি রোডও। তাই ক্রেতা আসেনি শিয়ালদহের দিক থেকেও। পুলিস এদিন বড়বাজারের ব্যবসা পট্টিগুলির মুখ গার্ডরেল দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিল গলি থেকে চোরাগোপ্তা হাঙ্গামা হওয়ার আশঙ্কায়। ব্যবসায়ীদের যে পরিচিত খরিদ্দাররা এসেছিলেন, তাঁরাও এদিন দিশাহারা হয়ে পড়েন। অনেকেই ঘুরপথে দোকান খুঁজতে গিয়ে বড়বাজারের গোলকধাঁধায় পড়ে নাজেহাল হন।
পুলিস যে সময় থেকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে, তখন থেকেই দোকানের ঝাঁপ নামাতে কালবিলম্ব করেননি ব্যবসায়ীরা। ফলে কিছু সময়ের মধ্যে খাঁ খাঁ করতে শুরু করে ব্যবসা চত্বর। কাপড়ের ব্যবসায়ী গণেশ আগরওয়াল আক্ষেপের সঙ্গে বললেন, ‘আমরাও নির্যাতিতার বিচার চাই। জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদ প্রয়োজন। কিন্তু এভাবে ব্যবসা বন্ধ করে দিনভর আন্দোলনের কী অর্থ, তা জানা নেই।’ কচুরি-জিলিপির দোকানদার নবীন জয়সওয়াল খাবারের সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এম জি রোডের পাশে। হতাশ হয়ে জানালেন, ‘এই খাবার এখন কী হবে? এই ক্ষতির দায় কে নেবে?’ বহরমপুর থেকে পাইকারি কেনাকাটা করতে বড়বাজারে এসেছিলেন সাগর ঘোষ। কেনাকাটা হয়নি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় কোন পথে নিরাপদে শিয়ালদহ পৌঁছবেন তা জানতে একাধিক পুলিসকে জিজ্ঞাসা করলেন। তাঁর চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ।
এদিন পোস্তা এলাকাতে সন্ধ্যা পর্যন্ত লরি ঢুকতে দেয়নি পুলিস। তাই সেদিকটিতেও থমকে ছিল বাজারহাট। বড়বাজার লাগোয়া জগন্নাথ ঘাট ফুলবাজারে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি হয়নি ফুল-মালা। ডাঁই হয়ে পড়ে গাঁদা-রজনীগন্ধা। সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বললেন, ‘একদিনে ৪০ লক্ষ টাকারও বেশি ক্ষতি হল আমাদের। কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনস’য়ের প্রেসিডেন্ট সুশীল পোদ্দার বললেন, ‘পুজোর মুখে বড়বাজারে কেনাবেচা বন্ধ থাকার মানে এক দিনে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি। শুধু কাপড়ের ব্যবসা নয়, এই এলাকায় এমন কোনও জিনিস নেই যা বিক্রি হয় না। পুজোর আগে এখানে বেচাকেনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তাই ব্যবসায়ীরা একদিনেই অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন।’