এই সময়: মঙ্গলবার অভিযানের আগে থেকেই কার্যত দুর্ভেদ্য করে ফেলা হয়েছিল রাজ্যের প্রধান সচিবালয় নবান্নকে। হাওড়া স্টেশন তো বটেই, কলকাতা ও সাঁতরাগাছি থেকেও নবান্নে পৌঁছনোর সব রাস্তারই একটি অংশ খোলা রেখে বন্ধ করে দেওয়া হয় বাকিটা। সেটা এ দিন সকালের প্রথম দিকে। তবে ঘড়ির কাঁটা সাড়ে ৮টা ছাড়াতে না-ছাড়াতে সব রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।এমনকী, হাঁটা দূরত্বের মন্দিরতলা থেকে নবান্নে আসার রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে নবান্নর কর্মীদের পরিচয়পত্র দেখে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দিনভর নবান্নর পরিবেশ ছিল থমথমে। অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিন নবান্ন ছিল বেশ কিছুটা ফাঁকা। যাতায়াতের অসুবিধে হতে পারে আঁচ করেই অনেকে এ দিন অফিসমুখো হননি।
এমনিতেই নবান্নর নিরাপত্তা আঁটসাঁট, তবে এ দিন নবান্ন যেন দুর্গের চেহারা নিয়েছিল। যাঁরা এ দিন অফিসে এসেছিলেন, তাঁরা পৌঁছে যান সকাল সকাল। কড়া পুলিশি ব্যবস্থা থাকলেও আন্দোলনকারীদের একাংশ নবান্নর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে নবান্নর ভিতরে কর্মীদের মধ্যেও সাময়িক উত্তেজনা ছড়ায়। অফিস থেকে ফেরার পথেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয় তাঁদের।
এ সবের মধ্যেই আজ, বুধবার বিজেপি ১২ ঘণ্টা বন্ধের ডাক দিয়েছে শুনে মুশকিলে পড়েন অনেকে। যাতায়াতের অসুবিধা হবে ভেবে সাধারণত বন্ধের আগের দিন সরকারি কর্মীদের অনেকেই অফিসে থেকে যান। মঙ্গলবারও বাড়ি ফেরার অসুবিধে এবং বুধবারের বন্ধের জন্য বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মীদের কেউ কেউ নিজেদের কর্মস্থলে রাতে থেকে যান।
কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নবান্ন পর্যন্ত বাস সার্ভিস রয়েছে। কর্মীরা সাধারাণত সেই সব বাসে করেই অফিসে আসেন। এ দিন যাঁরা অফিসে এসেছিলেন, তাঁরা সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যেই নবান্নে ঢুকে যান। হাওড়া স্টেশন থেকে ফোরশোর রোড হয়ে নবান্নর দূরত্ব তিন কিলোমিটার। সেই দূরত্ব টুকু পার হতেই এ দিন যথেষ্ট বেগ পেতে হয় কর্মীদের।
কারণ, এই পথ দিয়ে আন্দোলনকারীরা নবান্ন অভিযান করবে বলে রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করেছিল। ফলে, একটু বেলায় যাঁরা নবান্নে আসার চেষ্টা করেন, তাঁদের হেঁটেই অফিসে পৌঁছতে হয়। বিভিন্ন বিভাগের কর্তারা জানান, এ দিন অফিসে উপস্থিতির হার ছিল অনেকটাই কম। কর্মীদের অফিসে হাজিরা নিয়ে অবশ্য কোনও কড়াকড়ি ছিল না।
এরই মধ্যে দুপুর ৩টে নাগাদ হাওড়ার চ্যাটার্জি হাটের দিকে থেকে বেশ কয়েক জন আন্দোলনকারীকে নবান্নের উত্তর গেটের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। যদিও নবান্ন থেকে ১০০ মিটার দূরে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। শুরু হয়ে যায় তুমুল ধস্তাধস্তি। কয়েকটি ছোট ব্যারিকেড আন্দোলনকারীরা ভেঙে ফেলেন। তবে বড় ব্যারিকেডের আগেই তাঁদের আটকে দেওয়া হয়।
সেই সময়ে নবান্নর কর্মীদের উপর থেকে উঁকিঝুঁকি দিতে দেখা যায়। শেষমেশ পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়। এর আগে একাধিক বার অভিযানের ডাক দেওয়া হলেও নবান্নের এত কাছে আন্দোলনকারীরা কখনও আসতে পারেননি বলে নবান্নর কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন।