আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নামে নবান্ন অভিযান ছিল মঙ্গলবার। ছাত্ররা ছাড়াও বহু মানুষ যোগ দেন সেখানে। গিয়েছিলেন জেলার অনেকেও। পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, লাঠির ঘায়ে কয়েক জন আহত হয়েছেন বলে দাবি। প্রশান্ত আইচ নামে বর্ধমানের ইছলাবাদের এক যুবক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
সকালে বর্ধমান থেকে প্রায় পঞ্চাশ জন দু’টি দলে মুম্বই মেলে কলকাতা যান। স্টেশনে লাঠিতে বাঁধা জাতীয় পতাকা নিয়ে জিআরপির সঙ্গে কথা কাটাকাটিও হয় কয়েক জনের। জানা গিয়েছে, একটি দল হাওড়া থেকে লঞ্চে শোভাবাজার, সেখান থেকে অটোয় কলেজ স্ট্রিট যায়। মিছিল করে ময়দান মেট্রোর কাছাকাছি জড়ো হন তাঁরা। তাঁদের দাবি, কন্টেনার দিয়ে আটকানো হয় তাঁদের। কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, লাঠিচার্জ করে ময়দান দিয়ে বার করে দেয় পুলিশ। চার-পাঁচ জন আহত হন বলেও দাবি। আহতদের মধ্যে তমাল ঘোষ, দেবেশ কোনারেরা বলেন, ‘‘পায়ের কাছেই কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটে। কোনও প্ররোচনা ছাড়া পুলিশ হামলা চালিয়েছে। কারও হাতে, পায়ে লেগেছে। এখনও চোখ জ্বলছে।’’ আর একটি দল হাওড়া ময়দান দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। সেখানেও জলকামান, লাঠিচার্জ করা হয়। প্রশান্ত আইচ ছিলেন ওই দলেই। আন্দোলনে থাকা নিশান্ত নন্দ বলেন, ‘‘হাওড়া ময়দানে পুলিশের ব্যারিকেডের কাছে যেতেই হামলা চালানো হয়। তাড়া খেয়ে আমরা ফিরে আসি। হাওড়া স্টেশনের ২১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে বেরিয়ে শহরের ভিতর দিয়ে নবান্নের দিকে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আটকে দেয়।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা, রাকেশ দাস, শর্মিষ্ঠা হীরা দত্তরা কলকাতা গিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। বিজেপির এক নেতা সুমিত দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতেও মা, মেয়ে রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি নিয়েই আন্দোলনে গিয়েছিলাম।’’ তাঁদের দাবি, বর্ধমানের দু’জন আহত হন এবং একজন গ্রেফতার হন।
তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, ‘‘আর জি কর কান্ডের তদন্ত করছে সিবিআই। তার পরেও ছাত্রদের নাম করে বিজেপি অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করছে।’’ এবিভিপি-র এক কর্মকর্তা রাজেন সেন জানান, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, রাজ কলেজ, বিবেকানন্দ কলেজ মিলিয়ে তাদের সঙ্গে প্রায় ৭০ জন পড়ুয়া এই অভিযানে গিয়েছিলেন। তাঁরা ভিক্টোরিয়ার কাছে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। জল কামান এবং কাঁদানে গ্যাসে পিছু হটতে বাধ্য হন।
অম্বিকা কালনা, ধাত্রীগ্রাম, বাঘনাপাড়া, পূর্বস্থলী, পাটুলি থেকেও বহু মানুষ গিয়েছিলেন। তাঁদের অনেকেই পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ জানান। পূর্বস্থলীর প্রহ্লাদ ঘোষ বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করে নবান্নের দিকে এগোনো হচ্ছিল। পুলিশ যে ভাবে আটকাল তাতে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস থাকবে না আর।’’ পূর্বস্থলী উত্তরের বিজেপির এক মণ্ডল সভাপতি অতুলচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘ছাত্রদের অভিযানে পাশে থাকতে গিয়েছিলাম। পুলিশ বেধড়ক লাঠি চালিয়ে প্রতিবাদীদের দমন করেছে।’’ আদালত চত্বর, বাজার, চায়ের দোকানেও মোবাইল, টিভিতে দিনভর চোখ রাখতে দেখা যায় অনেককে।
বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১৪ অগস্ট যে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল, তা এ দিন অতি সক্রিয় ছিল। যে ভাবে নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরেছে, তা নিন্দনীয়। রবিবার দলের ডাকা বন্ধে মানুষ এর জবাব দেবেন।’’ তৃণমূলের রাজ্য মুখপত্র তথা কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘আমরা প্রথম থেকে বলেছি নবান্ন অভিযানে বিজেপি সক্রিয়। তা প্রমাণ হয়েছে। গুন্ডামি করা হয়েছে। পুলিশ সংযত ছিল। বিজেপির ডাকা বনধ্ মানুষ প্রত্যাখ্যান করবেন।’’